যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ্ গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টার কিছু পরে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে শপথ নেন তিনি। দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথে তিনি সংবিধানকে ‘সংরক্ষণ ও রক্ষা করার’ প্রতিজ্ঞা করেন। শপথ গ্রহণকালে ট্রাম্পের কাছে দু’টি বাইবেল দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি তার মায়ের দেয়া এবং অন্যটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ব্যবহৃত বাইবেল বলে জানা যাচ্ছে।
ট্রাম্পের কিছুক্ষণ আগে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা জেডি ভান্স।
ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সময় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তাঁর স্ত্রী জিল বাইডেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ পাঠ করেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। তিনিই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে ক্ষমতায় বসা প্রেসিডেন্ট।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৭ সালে ক্যাপিটল ভবনের পাশে ন্যাশনাল মলে বিপুল আয়োজনে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার বাদ সাধে তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়া। সে কারণেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে। ৪০ বছর আগে ১৯৮৫ সালে একই কারণে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে শপথ নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান।
নিজের প্রথম মেয়াদের তুলনায় এবার ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি ট্রাম্প। দেশের ভেতরে যেমন অর্থনীতি, অভিবাসনসহ নানা সংকট চলছে, তেমনই যুদ্ধবিগ্রহ এবং ক্ষমতার পাল্লাপাল্লিতে অস্থিতিশীল পুরো বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই সবকিছুই সামাল দিতে হবে তাঁকে। এ কাজে পাশে পাবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে। ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্পের আগে নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ভ্যান্স।
‘আমেরিকার পতনের দিন শেষ’ : :শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণ দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ঠিক এখন থেকে আমেরিকার সুবর্ণ যুগের সূচনা হলো। আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরও উন্নতি করবে। সারা বিশ্বে আবার সম্মান অর্জন করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে ঈর্ষা করবে সব দেশ। মার্কিনদের ব্যবহার করে কাউকে আর সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পতনের সময় শেষ হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, গত নির্বাচনে তাঁর একটি ম্যান্ডেট ছিল, যেসব প্রতারণা হয়েছে তার জবাব দেওয়া। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বিশ্বাস, তাঁদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে চান তিনি। এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার পতনের দিন শেষ। নিজের অভিষেকের দিনকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
গির্জা ও হোয়াইট হাউস হয়ে ক্যাপিটলে ট্রাম্প : শপথ নিতে ক্যাপিটল ভবনে পৌঁছার আগে ট্রাম্প তাঁর স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে প্রথমে গির্জা ও পরে হোয়াইট হাউসে যান। ট্রাম্প যথারীতি কোট–টাই পরলেও মেলানিয়ার নজরকাড়া পোশাকে আলাদা করে চোখে পড়ছিল তাঁর হ্যাট।
ট্রাম্প ও মেলানিয়া প্রথমে যান ওয়াশিংটনে সেন্ট জনস এপিস্কোপাল চার্চে। এটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক রীতির অংশ। এ সময় সেখানে ছিলেন ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, সুন্দর পিচাই, টিম কুকসহ প্রযুক্তি অঙ্গনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। চার্চে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ট্রাম্প ও মেলানিয়া যান হোয়াইট হাউসে। সেখানে তাঁদের স্বাগত জানান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও বিদায়ী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। হোয়াইট হাউসে চা–চক্রে যোগ দেন। সেখান থেকে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সবাই রওনা দেন ক্যাপিটলের উদ্দেশে।
ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগেই উপস্থিত হন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা। ছিলেন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। অনুষ্ঠানে দেখা গেছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকেও। বিদেশি নেতাদের মধ্যে ছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই।
অনুষ্ঠান শুরুর জন্য অতিথিদের অপেক্ষার মধ্যেই হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটলে এসে পৌঁছান ট্রাম্প, মেলানিয়া, বাইডেন ও জিল। ট্রাম্প যখন অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করছিলেন, তখন ভেসে আসছিল গানের সুর। হেঁটে গিয়ে ট্রাম্প নিজের আসনে বসেন। প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জেডি ভ্যান্স। তাঁকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানা। বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নেন জেডি ভ্যান্স। বাইবেল ধরে রেখেছিলেন স্ত্রী উষা ভ্যান্স। এ সময় উষার কোলে ছিল তাঁদের শিশুসন্তান।
এরপর ট্রাম্পকে শপথ পড়ান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া বাইবেল ধরে ছিলেন। শপথ শেষ হওয়ার পরপর তোপধ্বনিতে সম্মান জানানো হয় নতুন প্রেসিডেন্টকে।
আলোচনায় নির্বাহী আদেশ : ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরপরই তাঁর বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার কথা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোচনা অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে নির্বাহী আদেশ নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই সোচ্চার ট্রাম্প।
এ ছাড়া অভিষেকের পরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সংক্রান্ত প্রকল্পের গতি বাড়ানো, সরকারের কার্যকারিতাবিষয়ক দপ্তরের গঠনপ্রক্রিয়া, ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যাসংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশ, আয়রন ডোমের মতো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশনা এবং সামরিক বাহিনীর কিছু নীতি বাতিলসহ নানা নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার কথা ছিল ট্রাম্পের।