মৌলভীবাজারে খামারে অজানা রোগ, দেড় লাখ মুরগির মৃত্যু

মৌলভীবাজারে পোল্ট্রি খামারগুলোতে অজানা রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দশদিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মে দেড় লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে লেয়ার, বয়লার এবং সোনালী জাতের মুরগি।

খামার মালিকরা জানিয়েছে, তারা নানা ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। ফলে এই রোগ দ্রুত গতিতে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে এই রোগকে ‘রাণী ক্ষেত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে রোগটির প্রকৃত কারণ জানা যায়নি এবং আরও তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানান, রোগটির লক্ষণ দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি রাণী ক্ষেত, তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া সহ সবকটি উপজেলায় এ রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটেছে। রোগের কারণে মুরগিগুলো প্রথমে ঝিমুনি দেখাতে শুরু করে এবং পরে একে একে মারা যায়। ফার্ম মালিকরা জানান, তারা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করেও রোগটি প্রতিরোধ করতে পারেননি। ফলস্বরূপ, জেলার পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে মারাত্মক আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (৮ মার্চ) পর্যন্ত রাজনগর উপজেলার জনতা পোল্ট্রি এবং সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া পোল্ট্রি ফার্মে একদিনে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মোরগ মারা গেছে। একই দিনে, আরও ৪ হাজার মুরগি আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা জানান, তারা করোনাকালেও এমন ক্ষতির সম্মুখীন হননি। তবে এবারের রোগের কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শ্যামরাবাজার এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. সায়েম জানান, গত মাসের মধ্যে তার দুটি ফার্মে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি মারা গেছে। তার মতে, এবারের ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।

অপর এক ফার্ম মালিক, খালেদ আহমেদ জানান, তার দুটি ফার্মে ৮ হাজার বয়লার এবং লেয়ার মুরগির বাচ্চা উঠেছিল। রোজা ও ঈদে বিক্রি করে তিনি কিছু আয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু এখন তার ১ হাজার মুরগি মারা গেছে।

পোল্ট্রি ফার্ম সমিতির সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কমলগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মে ২০ হাজার, কুলাউড়ায় ৩০ হাজার, এবং রাজনগরে ৪০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে।

মৌলভীবাজারের একটি খামারের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং ফার্ম পরিদর্শন করছে। তবে, পোল্ট্রি ফার্ম মালিকদের দেওয়া মৃত মুরগির সংখ্যা এবং তথ্যের সঙ্গে একমত না হয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মুরগির মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১ হাজার ১৩৩ টি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আরও নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং আক্রান্ত ফার্মগুলোতে ওষুধ প্রয়োগ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু, স্থানীয় ফার্ম মালিকরা অভিযোগ করেছেন যে, এতদিনেও কোনো কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

পোল্ট্রি ফার্ম মালিকরা শঙ্কিত যে, যদি এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়ে, তবে পুরো জেলার পোল্ট্রি ব্যবসা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়বে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.