মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও হতাশায় প্রান্তি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিবারে এনে দিয়েছিলেন খুশির জোয়ার। তবে এ সাফল্যে আনন্দের বদলে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে প্রান্তির পরিবারে। কারণ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন প্রান্তি ও তার পরিবার।

প্রান্তির বাবা রমেন কুমার বিশ্বাস দিনমজুরের কাজ করেন। মা চঞ্চলা বিশ্বাস বাড়িতে মুড়ি ভেজে শহরের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। মা-বাবার এই স্বল্প আয়ে চলে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়া। প্রান্তি দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। তার বড় ভাই রাহুল বিশ্বাস একটি বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিপ্লোমা পাস করে বেকার জীবনযাপন করছেন।

প্রান্তি বিশ্বাসের (১৮) বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর গ্রামে।

শহরতলির কানাইপুরের বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন প্রান্তি। ২০২৪ সালে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি হবেন ও সামনে কীভাবে চলবে লেখাপড়ার খরচ, এ নিয়ে কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না তারা।

প্রান্তি বিশ্বাস বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেতে ফরিদপুরের একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছি। সৃষ্টিকর্তা আমার দিনরাত শ্রমের ফলাফল দিয়েছেন। প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চিকিৎসক হওয়ার জন্য মেডিকেলের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমি সবার কাছে আশীর্বাদ চাই, যেন স্বপ্ন পূরণ করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারি।

প্রান্তির মা চঞ্চলা রানী বিশ্বাস বলেন, মেয়ের মুখে যখন শুনলাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হয়েছে, ডাক্তার হবে, তখনকার আনন্দ আর বলে বোঝানো যাবে না। তবে এখন নতুন চিন্তা মেয়ের ভর্তিসহ পড়ালেখার খরচ জোগানোর। কীভাবে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।

ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রান্তি বিশ্বাস দারিদ্র্যকে জয় করেই এই পর্যন্ত এসেছে। আর্থিক সংকটসহ কোনো সংকটই যে দমাতে পারে না, তার একটি দৃষ্টান্ত প্রান্তি। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমি আহ্বান জানাব, প্রান্তিদের মতো ফুল যেন অর্থের অভাবে ঝরে না পড়ে।

You might also like

Comments are closed.