মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের প্রতি কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে তার ‘গুরুতর পরিণতি’ সম্পর্কে দেশটির সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির বিশেষ দূত মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে ফোন করে এ সতর্কতা জানান বলে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। খবর রয়টার্সের
সোমবারই জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার বার্জেনার সামরিক জান্তার উপপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অধিকারকে যেন অবশ্যই সম্মান করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিহিংসার শিকার যেন না করা হয় তা নিশ্চিত করতে চাপ দেন শানার বার্জেনার।মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে তিনি জানান, বিশ্ব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং কঠোর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।
বার্জেনার সেনাবাহিনীকে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ রাখা নিয়েও সতর্ক করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র।
এদিকে এই আলাপ সম্পর্কে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, সামরিক কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি সোয়ে উইন জাতিসংঘের দূতের সঙ্গে প্রশাসনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। ‘মিয়ানমারের যা ঘটছে সেই সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে’ জাতিসংঘের দূতকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গত ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ জয় পায়। এনএলডি নিরঙ্কশ জয় পেলেও সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তারা নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিন ভোরে অং সান সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্টসহ এনএলডির শীর্ষ বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তারের পর এক বছরের জন্য মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকে টানা সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ চলছে দেশটিতে।
রোববার রাতে মিয়ানমারের প্রধান শহরগুলোতে সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করা সত্ত্বেও অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। তারা কারাবন্দি নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদকারীরা সোমবার ফের বিক্ষোভ দেখান। তবে আগের দিনগুলোতে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে এলেও এদিন তাদের সংখ্যা কম ছিল।
মঙ্গলবার ভোর থেকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে ফের জড়ো হতে শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় রাতের মতো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ। এতে অভ্যুত্থান বিরোধীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
সেনাবাহিনী তাদের তল্লাশি ও আটক করার ক্ষমতার আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো স্থগিত করার পর রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছেন তারা।
স্থানীয় ‘অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার’ নামে এক গোষ্ঠী বলেছে, নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ অন্যায় তৎপরতা চালানোর জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সোমবার পর্যন্ত ৪২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে।