মিয়ানমারে চলছে নজিরবিহীন জরুরি পরিস্থিতি

মিয়ানমারে মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ আবারও ব্যর্থ হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের বর্তমান নাজুক ভূমিকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল অভিযানের পর জাতিসংঘ গঠিত তদন্তেই তাদের বেশ কিছু ব্যর্থতার তথ্য উঠে আসে। দেশটিতে জাতিসংঘ আবারও ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের হয়ে অতীতে সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মিয়ানমারবিষয়ক একটি বিশেষ পরামর্শক কমিশন গঠন করেছেন। ওই কমিশন গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আবারও ভুল করার ঝুঁকিতে আছে জাতিসংঘ। সামরিক জান্তার কারণে মিয়ানমারে দুর্দশা চলছে। এটি মোকাবেলায় জাতিসংঘের কার্যকর নেতৃত্ব ও উপযুক্ত কৌশল প্রয়োজন।

মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ পরামর্শক কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়াংহি লি বলেছেন, মিয়ানমারের জনগণের ওপর সিনিয়র জেনারেল অং মিন হ্লাইংয়ের সহিংসতার মাত্রা ভয়ংকর। কোনো কিছুর ওপরই যে তার নিয়ন্ত্রণ নেই তা সহিংসতার মাত্রার মধ্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, জান্তা মিয়ানমারে সহিংসতার কারণ। একে দুই পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত বলা গুরুতর অপব্যাখ্যা।

মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ পরামর্শক কমিশন বলেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মিয়ানমারের জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর সহিংসতা দেশকে চরম সংকটে ফেলেছে। মিয়ানমারজুড়ে নজিরবিহীন জরুরি পরিস্থিতি চলছে। মিয়ানমারের জনগণ মনে করছে, জাতিসংঘ তাদের জন্য কিছুই করছে না।

বিশেষ পরামর্শক কমিশন আরো বলেছে, মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বহীনতা এবং নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থা চলছে। এর ফলে মিয়ানমারে জাতিসংঘের ব্যর্থতার ইতিহাসে আরো আট মাস যোগ হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সংকটকে সশস্ত্র সংঘাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ পরামর্শক কমিশন মনে করে, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্য ও ভাবনা যথার্থ নয়। এর ফলে মিয়ানমারে সমস্যা আরো খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।

বিশেষ পরামর্শক কমিশন মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিকভাবে সমস্যা দেখছে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে রোজেনথাল প্রতিবেদনে মিয়ানমারে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা তদন্ত করা হয়েছিল। সেখানে জাতিসংঘের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পাশাপাশি কাঠামোগত অকার্যকারিতার বিষয়ও উঠে এসেছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব থেকে শুরু করে আবাসিক সমন্বয়কের সম্পৃক্ততাও তখন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। আবারও জাতিসংঘের সে ধরনের ব্যর্থ হওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শক কমিশন মনে করে।

পরামর্শক কমিশন সামরিক বাহিনীকে নিয়ে মিয়ানমারে চলমান সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। পরামর্শক কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মারজুকি দারুসমান বলেন, মিন অং হ্লাইং ও তার নিষ্ঠুর বাহিনীর অভ্যুত্থান-পরবর্তী ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে মিয়ানমারে সহিংসতার সমাধান খোঁজা অর্থহীন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘ দৃশ্যত সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং জিম্মি হয়ে পড়েছে। এর ফলে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর সামরিক সমাধান চালিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

মিয়ানমারে যে সশস্ত্র গোষ্ঠী সন্ত্রাস করছে তারা কোনো সরকার নয় বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই জান্তাকে মোকাবেলায় মিয়ানমারে জাতিসংঘের উপযুক্ত কৌশল প্রয়োজন। মিয়ানমারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মসূচি, তহবিল ও সংস্থা থাকা সত্ত্বেও চার বছর ধরে কোনো স্থায়ী আবাসিক সমন্বয়ক নেই।

অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার সিডোটি বলেন, এই সংকটজুড়ে একের পর এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারে জাতিসংঘের কার্যকারিতা কমেছে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.