মানিকগঞ্জে সূর্যমুখীর হাসিতে কৃষকের মনে প্রশান্তি

মানিকগঞ্জে বিভিন্ন এলাকাতে সূর্যমুখীর চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। অল্প পুঁজিতে দিগুণ লাভ হওয়াতে দিন দিন সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কম বেশি সূর্যমুখীর দেখা মিলছে। চলতি বছর ফলন ভালো হওয়ায় তাই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন সবুজের মাঝে হলুদ ফুল উঁকি দিচ্ছে।

সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। এটি তেল জাতীয় ফসল হলেও এই ফুল সবুজের মাঝে দেখলে মনে হয় যেন হাজারো সূর্য একসঙ্গে খেলা করছে। মাথার ওপর যখন সূর্যের আলো ঝলমল করে ঠিক তখনই হলুদ রঙের এক নিরব ইশারায় অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমীকদের মুগ্ধ করে তোলে ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চাষিরা অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন। চলতি বছর আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে ৪০ হেক্টর জমিতে এই সূর্যমূখীর আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষিদের প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। বীজ (সূর্যমুখী) বিক্রি করা যাবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে তেল উৎপাদন করলে বিঘা প্রতি ১০ লিটার তেল পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী তেল মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে এই ফুলের তেল হার্টের জন্য ভালো।

সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী এলাকার চাষি লিয়াকত মিয়া বলেন, ‘আমি আমার বাড়ির পতিত জমিতে এ বছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। যে টাকা আমার খরচ হয়েছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ হবে৷ তবে আমি এই ফুলের বীজ বিক্রি না করে নিজ বাড়িতে তেল উৎপাদন করে খাবো।’

সদর উপজেলার দিঘি ইউনিয়নের ভাটবাউর গ্রামের চাষি আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমার এই ১৫ শতাংশ জমি ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় তেমন কোনো ফসল আবাদ করতে পারি না। কৃষি বিভাগের সহোযোগিতায় এই বছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছি,ফলনও ভালো হয়েছে। এই জমিতে যে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে আমার তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভ হবে। আমার দেখাদেখি অনেকেই এই তেল জাতীয় ফসল আবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।বীজ বিক্রি না করেও নিজেদের জন্য তেল উৎপাদন করে খেলেও বছরে অনেক টাকা সাশ্রয় করা যাবে।’

কলেজ শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও হাতেগোনা কয়েক জায়গায় সূর্যমুখীর চাষ হতো। এ বছর প্রায় সব এলাকাতে সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই লোকজন আসছেন। তারা ফুলের ছবি তুলছেন। আমরাও বন্ধুরা মিলে এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে এসেছি।’

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, সূর্যমুখী তেল জাতীয় ফসল। এই ফসল আবাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সূর্যমুখীর আবাদ এই জেলায় দিন দিন বাড়ছে। এই ফসলের বীজের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে দেশ ব্যাপী। চাষিরা এই সূর্যমুখীর আবাদ করে নিজেদের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মেটাতে পারবেন বলে আশা করছি।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.