মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: যুক্তরাজ্যে চাকরি ছাড়তে চান ২৫ শতাংশ তরুণ কর্মী

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে গত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যের এক-চতুর্থাংশ তরুণ কর্মী তাদের কাজ ছাড়ার কথা চিন্তা করছেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির নতুন জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপে আরও বলা হয়ে, ১০ শতাংশ কর্মী দীর্ঘ সময় ধরে কাজ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা করেছেন। ফলে অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণকারী সংখ্যা বাড়ছে, যা যুক্তরাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই জরিপে তিন শতাধিক কোম্পানির প্রায় ৪ হাজার কর্মীর অংশগ্রহণ করেছেন। এতে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী আরও ২০ শতাংশ কর্মী গত বছর চাকরি ছাড়ার কথা চিন্তা করেছেন। এ ছাড়া, অন্য বয়সী কর্মীদের চেয়ে ৩৫ বছরের কম বয়সী কর্মীরা বেশি চাকরি ছাড়তে চান। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাকে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে গত বছর অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার পরিমাণ রেকর্ড ৯ দশমিক ৪ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ২২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে কর্মক্ষম বয়সী ব্যক্তিরা কাজের জন্য উপলব্ধ বা আগ্রহী নন এবং তারা কোনো কাজে নিয়োজিত নন। অর্থাৎ, যারা কাজ খুঁজছেন না, চাকরির জন্য আবেদন করছেন না, শারীরিক বা মানসিক কারণে কাজ করতে অক্ষম, তাদের অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার চাকরির সুযোগ কমে গিয়ে ৮ লাখ ১৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

পিডব্লিউসির তথ্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ নিয়োগকারী অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেখানে প্রায় অর্ধেকই নিয়োগকারী চাকরি ছাড়ার হার বাড়তে দেখেছে। পিডব্লিউসির সিনিয়র পার্টনার মারকো অমিত্রানো বলেন, উৎপাদনশীলতা এবং আর্থিক পারফরম্যান্সের ওপর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে কর্মবাজারের বাইরে থাকা মানুষকে কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, তা বর্তমানে আলোচনাগুলোর মধ্যে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা চাকরি ছাড়ছেন, তাদের এই প্রবাহ থামানো।

অর্ধেকেরও বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকা একজন কর্মীকে পুনরায় নিয়োগ করার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয়তাকে ‘সিস্টেমের অপব্যবহার’ হিসেবে দেখেছে।

অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে জরিপে ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন কাজে ফিরে যেতে আগ্রহী এবং ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে আগ্রহী নন।

এদিকে ২০১৯ সাল থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ২৮ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৪০ লাখে পৌঁছেছে।

অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের জন্য তাঁদের সুবিধা দেওয়ার খরচ (অর্থাৎ সুযোগ-সুবিধা বিল) বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খরচ ৪৮ বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছেছে।

পিডব্লিউসির স্থানীয় ও বিকেন্দ্রীকৃত সরকারবিষয়ক নেতা কেটি জনস্টন বলেছেন, কর্মীকে আবার কর্মবাজারে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সব স্তরের সরকারের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা কমাতে এবং সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তা করতে গুরুত্ব দিয়ে হয়ে থাকি, তবে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কেবল মানুষের কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মবাজার ছেড়ে যাওয়ার প্রবাহ থামানো।’

অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় এমন ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাদের নিয়োগকর্তারা তাদের কাজে রাখা জন্য আরও কিছু করতে পারতেন। তবে একটি বড় অংশই কোনো সহায়তা গ্রহণ করেননি বা কাউকে জানাননি।

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও কর্মসংস্থানে ফিরে আসার সবচেয়ে সাধারণ বাধাগুলোর মধ্যে ছিল দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, কর্মী পুনরায় কর্মবাজারে ফিরে আসার প্রধান বাধাগুলো হলো দক্ষতা ও শিক্ষার বৈষম্য। তাদের ফিরিয়ে আনতে নমনীয়তার পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে।

তথ্যসূত্র: দ্য রেজিস্টার

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.