মাথা ন্যাড়া করে অভিনব অভিশাপ নিখোঁজ সাংবাদিকের স্ত্রীর

২০১০ সালে সরকারের কট্টর সমালোচক, শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও কার্টুনিস্ট প্রাগিত একনালিগোডা গুম হয়েছিলেন। প্রাগিত মূলতঃ দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের উপর হওয়া নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন। আর, তামিল গেরিলাদের দমন করেই রাজনৈতিক মহলের ব্যাপক নজর কেড়েছিলেন দেশটির সদ্য সাবেক (২০১০ সালের প্রেসিডেন্ট) প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে।

প্রাগিত গুম হওয়ার জন্য মাহিন্দ’র অনুসারীদের দায়ী করেন তার স্ত্রী সান্ধিয়া। 

ওই ঘটনার পর থেকেই দুই সন্তানের মা সান্ধিয়া ন্যায়বিচার চেয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওই ঘটনার সন্দেহভাজনরা চিহ্নিত হলেও সবাই পরবর্তীতে মুক্তি পান। কিন্তু, তাতেও দমে যান নি সান্ধিয়া। একজন অধিকারকর্মী হিসেবে গৃহযুদ্ধে আপনজন হারানো হাজারো অসহায় নারীদের সাহায্য করে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি বিবিসি ২০২২ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রেরণাদায়ী ১০০ জন নারীর যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বিশ্বখ্যাত পপ তারকা বিলি আইলিশ, ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কার মতো নারীদের সাথে রয়েছে সান্ধিয়ার নামও। এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি সোমবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, কষ্ট ও যন্ত্রণার ১২টি বছর পেরিয়ে গেলেও তার স্বামীর সাথে ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজাপাকসেরা তার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেন না। শ্রীলঙ্কার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর এ খবর দিয়েছে।

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত রাজাপাকসে পরিবারের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সান্ধিয়া বলেন, “আমার প্রাণপ্রিয় স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার ১২ বছর পূর্ণ হয়েছিল ২৫শে জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে। ওইদিন নিজের মাথা ন্যাড়া করে এবং কালো পোশাক পরিধান করে রাজাপাকসেদের জন্য ‘স্বামীভক্তি অথুরা মহা সাপায়া’ নামক শক্তিশালী এক অভিশাপ দিয়েছিলাম, যারা ওই ঘটনার জন্য দায়ী। এটি খুবই শক্তিশালী এক অভিশাপ। আমার স্বামীর সাথে ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেউই তা থেকে মুক্ত হবে না।”

বিবিসি’র জন্য নির্বাচিত হতে পেরে গর্বিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম ২৫শে জানুয়ারি, ২০১০ সালে, যখন আমার স্বামী অপহরণ বা নিখোঁজ হয়েছিল। ওই সময় থেকেই আমি আমার স্বামীর ন্যায়বিচারের সন্ধানে নানান ধরনের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি।”

নিজ স্বামীকে অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি জানিয়ে সন্ধ্যা বলেন, “৪,৭১২ দিন হল তারা আমাদের কাছ থেকে প্রাগিতকে কেড়ে নিয়েছে। আমার অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘ এই যাত্রায় অনেক ভালো মনের মানুষ যেমন আমাকে সাহায্য করেছেন, তেমনি কেউ কেউ আমাকে আদালত থেকে থানায় যেতে দেরি করিয়েছেন৷ আমি যখন ২৫শে জানুয়ারি, ২০১০ সালে থানায় ছিলাম তখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে আমাকে ফোন করেছিলেন এবং চিন্তা না করতে বলেছিলেন এই বলে যে তিনি প্রাগিতকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন। আজ তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট৷ যদিও তিনি রাজনৈতিক চাপের মুখে সাক্ষীদের কাছ থেকে প্রাগিতকে খুঁজে বের করতে পারেন নি, আমি তার কাছে অনুরোধ করছি- তিনি যেনো অন্ততপক্ষে রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার অন্য হাজার হাজার মানুষকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করেন।”

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.