মাগুরার শিশুটির অবস্থার আরও অবনতি, দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

মাগুরার শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বুধবার (১২ মার্চ) সকালে তার দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকর্ষিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন শিশুটির চিকিৎসায় যুক্ত এক চিকিৎসক।

শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছে।

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বুধবার সকালে বলেন, তার (শিশুটি) অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। সে এখন জটিল পরিস্থিতির সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সকাল আটটার দিকে প্রথমবার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসায় তার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। পরে দ্বিতীয়বার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। সেবারও চিকিৎসায় তা ফিরে আসে। তার মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থায় আছে। তার গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ৩। মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে কোনো ব্যক্তির চেতনার মাত্রা হলো জিসিএস। মানুষের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৫। জিসিএস ৩ অবস্থাকে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ঘটনার সময় শিশুটিকে যখন ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়, তখন তার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। পরদিন বেলা ১১টায় হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত এই অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন না পেয়ে মস্তিষ্কের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিলে মস্তিষ্কের এত ক্ষতি হতো না বলে মন্তব্য করেন চিকিৎসক।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর গত শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্‌রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকরা।

শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার চার আসামির মধ্যে তিনজন পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তিন আসামিকে মাগুরা থেকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে আনা হয়। একই সঙ্গে শিশুটির ডিএনএ নমুনাও জমা দেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম জানান, তিন আসামিকে আবার মাগুরা জেলা কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মাগুরার এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনা চলছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। এর মধ্যেই দেশের আরও ছয় স্থানে শিশু-কিশোরীসহ নারীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.