মহানবী (সাঃ) যে সাত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন
সাতটি কাজ মানুষের জন্য ধ্বংসকারী। এসব কাজের ক্ষেত্রে অনেকেই অবহেলা করে। অথচ ইসলামে এসব কাজ হারাম এবং কবিরা গোনাহের শামিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সাতটি কাজ থেকে মুসলিম উম্মাহকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাহলো-
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারির বর্ণনায় এসেছে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন-
– আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা
ইসলামের প্রথম এবং প্রধান শিক্ষা হলো তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্মবাদের সাক্ষ্য দেয়া। এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। কেউ যখন আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে তখনই সে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক সাব্যস্ত করে। এ কাজ মানুষের জন্য ধ্বংসকারী। বিশেষ করে মুমিন মুসলমানের জন্য। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
– জাদুর অনুশীলন করা
ইসলামে জাদু নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ। এ কাজটিও মুমিন মুসলমানের জন্য ধ্বংসকারী। সে কারণেই জাদুকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ জাদুবিদ্যাকে ভবিষ্যৎ জ্ঞানের সংবাদবাহী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ ভবিষ্যতের জ্ঞান শুধু মহান আল্লাহই জানেন। অন্য কেউ নয়।
– কাউকে হত্যা করা
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ইসলামে হারাম ও মহাপাপ। ইসলামি হুকুমে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ব্যতীত অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ধ্বংসকারী কাজের একটি। কেননা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মানবতা হত্যার শামিল।
– সুদ খাওয়া
ইসলামে সুদ কার্যক্রম হারাম তথা কবিরা গোনাহ । সুদের সঙ্গে জড়িতরা ধ্বংসকারী পাপের সঙ্গে জড়িত। সুদ ধনীকে আরও ধনী করে দেয় আর গরিবকে আরও নিঃস্ব করে দেয়। তাই ইসলাম সুদকে হারাম করেছে।
– ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা
ইয়াতিমের দেখাশোনা করা প্রশংসনীয় ও সুন্নাত কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে ইসলামি খেলাফতের সব খলিফাগণই ইয়াতিমদের দেখাশোনা করতেন। ইয়াতিমের অধিকার নষ্ট করা হারাম ও মহাপাপ। কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ‘তোমরা ইয়াতিমের সম্পদ (অন্যায়ভাবে) গ্রাস করো না।’ তাই ইয়াতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা হাদিসে ঘোষিত ধ্বংসকারী কাজের একটি।
– যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। তাই যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়াও ধ্বংসকারী কাজের একটি।
– সতী-সাধ্বী মুমিনা নারীকে অপবাদ দেয়া।
ইসলামে অপবাদ দেয়া হারাম তথা কবিরা গোনাহ। কোনো নেককার সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অন্যায়ভাবে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার শাস্তি মারাত্মক। এটি মুমিন মুসলমানের জন্য ধ্বংসকারী কাজের একটি। কেননা কোনো নারীর প্রতি অপবাদ তার সংসার ও সামাজিক সুনাম আত্মীয়তার সব সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয়নবি ঘোষিত ধ্বংসকারী উল্লেখিত ৭টি কাজ থেকে বিরত থাকা। হাদিনের নির্দেশনা মেনে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস গ্রহণ করা, জাদুটোনা থেকে বিরত থাকা, কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা না করা, সুদের সঙ্গে জড়িত না হওয়া, ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস না করা, ইসলাম ও দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে না যাওয়া এবং মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।