মধ্যপ্রাচ্যে বেতন বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা

প্রায় এক কোটি প্রবাসী শ্রমিকের ৮০ লাখই কাজ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে

মধ্যপ্রাচ্যে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। সরকারি হিসেবের প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেও আসতে হচ্ছে অনেককে।  বন্দী দশায় উপোস থেকে আর নানা রকম নির্যাতন, মাথার ওপর দেনার দায় নিয়ে এখন দিশেহারা অনেকে।

জানা গেছে,  প্রায় এক কোটি প্রবাসী শ্রমিকের ৮০ লাখই কাজ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এসব শ্রমিকের মধ্যে বেশিরভাগই কর্মক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এই শ্রমিকরা যেমন বেতন বৈষম্যের শিকার; তেমনি বিদেশে যাওয়র সময় তাদের অভিবাসন ব্যয়ও সর্বোচ্চ।

শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলছেন, অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ বিদেশ দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় করার সুপারিশ করবে এই কমিশন।

মধ্য বয়সে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য জমি বেচে ধার-দেনা করে দেড় মাস আগে সৌদি আরবে যান আব্দুল হামিম। এক সপ্তাহর মধ্যেই টের পান তিনি দালালদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। গ্রামের দালালকে বিশ্বাস করে বিদেশের মাটিতে বিপদে পড়েন তিনি।

প্রবাস ফেরত এই শ্রমিক জানান, সরকারি হিসেবের প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয় তাকে। বন্দী দশায় উপোস থেকে আর নানা রকম নির্যাতন, মাথার ওপর দেনার দায়। তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ। সব মিলে এখন দিশেহারা হামিম।

দালাল চক্রের ফাঁদ, এজেন্সির দৌরাত্ম্য আর দূতাবাসের অবহেলা। প্রবাসে এটাই যেনো হামিমদের নিয়তি। দেশে ফিরে আইনি সহায়তার জন্য চেয়েছেন বেসরকারি সংস্থার সাহায্য। এমন ঘটনা একটি দুটি নয়। বরং হাজার হাজার। অথচ এসব সঙ্কটে প্রবাসে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাহায্য কমই পান প্রবাসী শ্রমিকরা।

গেলো ১৫ বছরে কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরেছে ৪৫ হাজার শ্রমিক। গেলো দশ বছরে ফিরেছে এক হাজার নারী শ্রমিকের মরদেহ। জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বা বীমার টাকাও পাননি অধিকাংশ শ্রমিক। অথচ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ ভোমরা এই শ্রমিকরা।

প্রবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধন নিশ্চিত করাসহ রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সমঝোতার মধ্য দিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্কট সমাধানের কথা বলছেন শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।

দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা এই শ্রমিকদের দক্ষতা নিশ্চিত করে বিদেশে পাঠানোর কথা হচ্ছে অনেকদিন। কিন্তু দালাল চক্র আর এজেন্সিগুলোর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সেটি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অতীতে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলে বাস্তবে কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.