ভিসা বিধিনিষেধে পর্যটন ব্যবসা কমেছে ৬০ শতাংশ

১০টি দেশে কমে গেছে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ

এক বছর ধরে অন্তত ১০টি দেশ বাংলাদেশি ভ্রমণ, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক ভিসাপ্রার্থীদের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী ভ্রমণকারী ও আগ্রহী অভিবাসী কর্মীরা ক্রমবর্ধমান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কয়েকটি দেশ অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘ভিসা বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছে।

বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটর ফোরাম (বিওটিওএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে ভিসা প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে গত ডিসেম্বর থেকে তাদের বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে। এতে এ খাতের প্রায় ৪২,০০০ কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতি চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য জটিলতা তৈরি করেছে। একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমানের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ট্যুর অপারেটরদের দাবি, বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম প্রধান গন্তব্য ভারতে গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভিসা প্রক্রিয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।


বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় কলকাতা ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। ছবিটি কলকাতা নিউমার্কেট থেকে তোলা।

গত এক মাস থেকে এক বছর ধরে অন্তত ১০টি দেশ বাংলাদেশি ভ্রমণ, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক ভিসাপ্রার্থীদের জন্য একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, নেপাল, মালয়েশিয়া ও ভুটানে ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ রয়েছে বলে ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন।

বিওটিওএফ-এর তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০-৪৫,০০০ বাংলাদেশি অবসর সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে বিমানে বিদেশ ভ্রমণ করেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস এবং মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান বাংলাদেশি পর্যটকদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশি পর্যটকদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে কাজাখস্তান।

বিওটিওএফ সভাপতি চৌধুরী হাসানুজ্জামান বলেন, ভিয়েতনাম আগে ই-ভিসা দিত, এখন তা বন্ধ করেছে। কম্বোডিয়া ও লাওসও ভিসা স্থগিত করেছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো কিছু ব্যবসায়ীর পর্যটন ভিসার অপব্যবহার, যা বৈধ পর্যটকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে।

ট্যুর অপারেটর তাসলিম আমিন শোভন জানান, তার কোম্পানি গত দুই বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় ৫০০ পর্যটক পাঠিয়েছে। শুধু ভিয়েতনামেই গত দুই বছরে ৩০,০০০-এর বেশি বাংলাদেশি অতিরিক্ত সময় অবস্থান করেছেন। প্রতি মাসে ২,০০০ থেকে ২,৫০০ বাংলাদেশি ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেন।

শোভন আরও বলেন, এ শিল্পের কিছু অসাধু ব্যক্তি সহজ ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে ৮,০০০-১০,০০০ টাকায় ভিসা সংগ্রহ করে তা ১-২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। ফলে এসব দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সমস্যা সমাধানে শোভনের পরামর্শ, যদি কোনো দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাদের উচিত প্রথমে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা। তবে, এ ধরনের কোনো উদ্যোগের কথা আমরা এখনো শুনিনি।

ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের পরিচালক মো. হাসান আবদুল্লাহ তৌহিদ বলেন, আমাদের জানা মতে, অতিরিক্ত সময় অবস্থানের কারণেই এসব দেশ ভিসা দিচ্ছে না। তবে আমরা নিয়মিত এ দেশগুলোর দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং ভিয়েতনাম দূতাবাসের কাছে পর্যটকদের উদ্বেগ জানিয়েছি।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত গড়ে প্রতি মাসে ৫,০০০ কর্মী নিয়োগ করত। তবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এ সংখ্যা নেমে মাত্র ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, ২০২৩ সালে ওমানে ১,২৭,০০০ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করলেও গত বছর এ সংখ্যা মাত্র ৩৫৮-এ নেমে এসেছে।

অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো গন্তব্যস্থলের ভিসা পেতেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। জুলাই মাসে উপসাগরীয় দেশটিতে শত শত বাংলাদেশির গণ-অভ্যুত্থানের সমর্থনে রাস্তার বিক্ষোভের পর দেশটি এসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।

ওমানে অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত শ্রমিক সরবরাহ এবং মালয়েশিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এর ফলে গত এক বছর ধরে বাংলাদেশিদের জন্য এ দুই শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

মালয়েশিয়ায়ও কমে গেছে বাংলেদেশি পর্যটক।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানের ভিসা পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মো. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। তবে, তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

ঢাকা-ভিত্তিক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন তার সন্তানের ফলো-আপ মেডিকেল চেকআপের জন্য থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে, ডিসেম্বর থেকে তিনি যে সংস্থাটি নিয়োগ করেছিলেন, তারা থাই ভিসার জন্য আবেদন করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বলেন, প্রথমে, আমরা ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম, কারণ ২০২৩ সালে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়েছিল। কিন্তু ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করার পর, আমরা থাইল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তবুও, আমরা এখনও আবেদন করতে পারছি না।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.