ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধে কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বিমান

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কার্গো অবকাঠামো বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে সরকার। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কার্গো পরিবহনে যুক্ত করা হচ্ছে সিলেটের ওসমানি ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে। এছাড়াও কার্গো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা ফি সমন্বয় করারও উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে।

বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের নিরবচ্ছিন্ন রপ্তানি নিশ্চিত করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ ও পরিবহন খরচ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং একমাত্র গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং এজেন্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিরবচ্ছিন্ন কার্গো কার্যক্রম সহজ করতে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বাসসকে বলেন, ‘আমরা বিমানের কার্গোকে আরও সাশ্রয়ী করার জন্য বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল ও গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং শুল্ক সংশোধন করতে একসঙ্গে কাজ করছি। কার্গো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত ফি ও খরচ সহজতর ও হ্রাস করতে সরকার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সকল অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করছে।’

মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘বাহ্যিক বাধাবিঘ্নের পরেও যেন বিমানে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, সেজন্য আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই হ্রাসকৃত হ্যান্ডলিং চার্জ ঘোষণার আশা করছি।’

উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেবিচক এরই মধ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করেছে। এছাড়াও, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে পূর্ণাঙ্গ কার্গো কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দ্রুত করার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বেবিচক জানিয়েছে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও খুব শিগগির কার্গো কার্যক্রম শুরু হবে।

সম্প্রতি বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ওসমানি বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিলেটের অত্যাধুনিক কার্গো টার্মিনাল অত্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আগে আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামো শিগগিরই দুই থেকে তিনগুণ বেশি কার্গো পরিচালনা করবে।’

এদিকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমানও এ কার্গো ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি সম্পর্কে জরুরি পদক্ষেপের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ভারতের বন্দর হয়ে যেসব পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না, সেসব পণ্য পরিবহনের চাপ মোকাবেলায় নতুন কার্গো কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে।’

বিমানের কার্গো বিভাগের পরিচালক শাকিল মেরাজ বলেন, ‘বিমান সিলেটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ২৭ এপ্রিল গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের একটি এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ পণ্যবাহী উড়োজাহাজ ৬০ টন তৈরি পোশাক নিয়ে স্পেনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে।’

শাকিল মেরাজ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই সিলেটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম স্থাপন করেছি এবং উদ্বোধনী কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। বিমান শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৪০০ জন অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেছে।’

গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে নোটিশ জারি করে দেশটির সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)। এর ফলে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।

গত ১৬ এপ্রিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এতে বাংলাদেশের ২০০০ কোটি টাকার খরচ বেড়েছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

You might also like

Comments are closed.