‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করি’

বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে ইদানীং প্রায়ই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হয় আন্দোলনকারীরা। যথারীতি তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সম্প্রতি এক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে, লাঠিপেটা না করে বরং লাঠিপেটার অভিনয় করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে। সে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশংসায় ভাসছেন রিয়াদ হোসেন নামের ওই পুলিশ সদস্য। এবার এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলেন তিনি।

রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘ডেমরা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত আছি। কখন কোন আন্দোলন হয় তা আমাদের জানা থাকে না। দুপুর নাগাদ (ঘটনার দিন) একদল আন্দোলনকারী সচিবালয়ের গেটের দিকে আসতে থাকে এবং সচিবালয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় তাদেরকে বাধা দেওয়া হয় এবং আমাদের সিনিয়র অফিসাররা বোঝান, সচিবালয় একটি সংরক্ষিত এলাকা, এখানে প্রবেশ করা নিষেধ। তো তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) বোঝানো হয়, যাতে সচিবালয়ে প্রবেশ না করে। ’

রিয়াদ আরও বলেন, ‘সিনিয়র স্যাররা ছিলেন, তাদের নির্দেশনায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিই ওখানে এবং সম্পূর্ণ কম বলপ্রয়োগ করে যাতে কারও ক্ষতিসাধন না হয়। আমি রাস্তায় বাড়ি দিয়ে, পাশে হচ্ছে বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিল- তাতে বাড়ি দিয়ে তাদের ভয় দেখিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করি। ’

পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশে এমনটি করেছেন জানিয়ে বাহিনীটির এ সদস্য বলেন, ‘অবশ্যই সিনিয়রের স্যারের নির্দেশ মোতাবেক। সিনিয়র স্যার আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাদেরকে (আন্দোলনকারী) যেন বেশি ক্ষয়ক্ষতি না করা হয়। তাদের যেন শুধু ভয় দেখিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয়। ’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুলিশে নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমাদের বাংলাদেশ পুলিশ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণে আমাদের শেখানো হয়েছে যে, যথেষ্ঠ কম বলপ্রয়োগ করে এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধন না করে যাতে আমরা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারি। তারাও (আন্দোলনকারী) আমাদের ভাই, তাদের যাতে কম বলপ্রয়োগ করে, আঘাত না করে যাতে জায়গা থেকে ছত্রভঙ্গ করতে পারি। এটাই আমাদের জন্য অনেক পাওয়া। ’

রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় চেইন অব কমান্ডের ওপরেই চলে। তো, আমার সিনিয়র স্যাররা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই। আর এটা আমি আমার নিজের জন্য করি নাই। এটা পেশাদারত্ব থেকে করেছি এবং আমি আমার পুরো পুলিশ বিভাগের জন্য করেছি এবং আমার পোশাকটার জন্য করেছি। যাতে বাংলাদেশ পুলিশের যে ভাবমূর্তি, তা যেন অক্ষুণ্ন থাকে। জনমনে বাংলাদেশ পুলিশের যে ভাবমূর্তি আমি চাই তা অক্ষুণ্ন থাকুক। বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় তাদের (জনগণের) বন্ধুসুলভভাবে কাজ করে যাক। ’

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রশংসায় ভাসছেন জানিয়ে রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘বাবা-মা সেভাবে অনলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত না তো, তারা ঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি। তো, আমার আশেপাশে যারা ছিল, বাসার আশেপাশে, তারা আম্মুকে হয়তো দেখাইছে। তো আম্মু কল দিয়ে বলেছে, ‘‘কেন মারামারি করতে গেলি?’’ পাড়া-প্রতিবেশী, চাচাতো ভাই, আরও যারা আছে আশেপাশে, সবাই কল দিয়েছিল এবং সবাই বলেছে, ‘‘হ্যাঁ, কাজটি ভালো করেছ।’’ এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে আরও ভালো কাজ করতে পারি সবাই সে রকম নির্দেশনাই দিচ্ছে। ‘

রিয়াদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি বন্ধু-বান্ধব মেনশন দিচ্ছিল বিভিন্ন পোস্টে। জনমনে যে ভাষ্য দেখলাম, অনেকগুলো কমেন্ট ছিল। তার মধ্যে সবাই ভালো বলতেছিল। এক জায়গায় বলল দেখলাম, আদর্শ মায়ের সন্তান। তো, আমার আম্মু সব সময় আমাকে একটা কথাই বলে যে, আমি যাতে কাউকে আঘাত না করি বা যাতে কারোর বিরুদ্ধে মারমুখী না হই।’
You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.