বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী, দেশে ভরিপ্রতি কত?

আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। স্পট মার্কেটে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩৩০ ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নতুন শুল্ক, মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। খবর খালিজ টাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের পর বাজারে এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা তৈরি হয়েছে। জুলাই মাসেই শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় হয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলার-যা রেকর্ড। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক ব্যবসা ও পরিবারের ব্যয় বাড়ায়, মুদ্রাস্ফীতি উসকে দেয়। আর এ ধরনের পরিবেশে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে।
এখন সবার নজর ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তব্যে। ধারণা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমার সম্ভাবনা ৮৪ শতাংশ। সুদ কমলে বন্ড ও ডলারের তুলনায় স্বর্ণ রাখার খরচ কমে যায়, ফলে দাম আরও চাঙা হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার এখন অস্থির অবস্থায় আছে। মার্কিন অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও মুদ্রাস্ফীতি ও ধীর প্রবৃদ্ধির টানাপোড়েন স্বর্ণকে শক্ত অবস্থানে রেখেছে। ভূরাজনীতিও বড় ভূমিকা রাখছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার খবরে বাজারে ওঠানামা হচ্ছে। তবে শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও কম।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ও ঋণের পরিমাণ এখন জিডিপির প্রায় ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে ডলারের প্রতি আস্থা ক্ষয় হতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল যাবে স্বর্ণের বাজারে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে এখন আউন্সপ্রতি দাম ৩ হাজার ৩৩০ থেকে ৩ হাজার ৩৬০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, যদি দাম ৩ হাজার ৪৫০ ডলার ভেঙে ওপরে ওঠে, তবে বছরের শেষে তা ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত যেতে পারে। বিপরীতে, ফেড যদি কঠোর অবস্থান নেয়, দাম নেমে আসতে পারে ৩ হাজার ৩০০ ডলারে।
সুইস ব্যাংক ইউবিএস জানিয়েছে, ২০২৬ সালের মার্চে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। জুনে ৩ হাজার ৭০০ ডলার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারা ২০২৫ সালে ইটিএফে (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) স্বর্ণের চাহিদার পূর্বাভাসও বাড়িয়ে ৬০০ টন করেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, স্বর্ণ এখন ফেডের সিদ্ধান্ত ও ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝখানে দোদুল্যমান। তবে অনিশ্চয়তার এই সময়ে স্বর্ণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তা ও সুযোগ-দুইয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ ও রুপা
দেশের স্বর্ণবাজারে টানা বাড়ার পর সামান্য কমলেও দাম রয়ে গেছে রেকর্ড উচ্চতায়। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সর্বশেষ ২৪ জুলাই স্বর্ণের দর সমন্বয় করে। তখন ভরিতে ১ হাজার ৫৭৪ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরির দাম ঠিক করা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা। এরপর থেকে এ দামে বাজারে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় চলছে। এর আগে টানা ২ দফায় মোট ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল স্বর্ণের দাম। এরমধ্যে গত ২২ জুলাই ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা ও ২৩ জুলাই ভরিতে ১ হাজার ৫৭৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
সবশেষ সমন্বয় করা দর অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা। পাশাপাশি ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ টাকা।
সবমিলিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৪৫ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। যেখানে ২৯ বারই দাম বাড়ানো হয়েছে। আর দাম কমেছে মাত্র ১৫ বার। অন্যদিকে গত বছর দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল। এছাড়া গতবছর ২৭ বার কমানো হয়েছিল স্বর্ণের দাম।
এদিকে সবশেষ ঘোষণায় স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। বর্তমানে বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮১১ টাকায়। পাশাপাশি ২১ ক্যারেটের ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ১ হাজার ৭২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
You might also like

Comments are closed.