বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিহুতে রঙিন পার্বত্য জনপদ
পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুনকে বরণের প্রস্তুতিতে পাহাড়জুড়ে শুরু হয়েছে রঙিন আয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু ও পাতাবাহার আমেজে মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড়ের প্রতিটি প্রান্ত। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসবের ধারা। সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে পাহাড়ি-সমতলের মানুষ মিলিত হচ্ছেন উৎসবের মাঠে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাঙামাটিতে বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করে সর্বজনীন পার্বত্য উৎসব কমিটি। শোভাযাত্রায় অংশ নেন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, ম্রোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ। উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন পর্যটকরাও।
উৎসব কমিটির সমন্বয়ক ঝিমিত চাকমা জানান, “এই উৎসব কেবল প্রাণেরই নয়, সম্প্রীতিরও প্রতীক। প্রতিবছর আমরা সব সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এক মঞ্চে তুলে ধরার চেষ্টা করি।”
নামের বিবর্তন ও সংস্কৃতির সমন্বয়
পূর্বে “বৈসাবি” নামে পরিচিত এই উৎসব এখন “সর্বজনীন পার্বত্য নববর্ষ” নামে আখ্যায়িত হচ্ছে। চাকমাদের “বিজু”, মারমাদের “সাংগ্রাই”, ত্রিপুরাদের “বৈসুক” এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের “বিষু”—সবকটি উৎসবের সুরকে একসূত্রে বাঁধার লক্ষ্যেই এই নামকরণ। উৎসব কমিটির সদস্য মংসানু মারমা ব্যাখ্যা করেন, “নতুন নামটি সব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে। আমাদের লক্ষ্য ঐক্য, বৈষম্য নয়।”
আয়োজনের ঝলক
– ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গানের অনুষ্ঠান
– স্থানীয় খাবারের স্টল
– হস্তশিল্প মেলা
– ফুল বিজু ও জলকেলি
– সম্প্রদায়ভিত্তিক পুজো ও প্রার্থনা
পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কৃষ্ণা চাকমা বলেন, “এই উৎসব পাহাড়ের সাংস্কৃতিক বহুত্বকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সুযোগ। সরকারও এগিয়ে আসছে সহযোগিতায়।”
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এই উৎসব এখন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিদার। স্থানীয় যুব সমাজের অংশগ্রহণে প্রতিবছরই বাড়ছে এর ব্যাপ্তি। উৎসবের শেষ দিনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরনো গীতির আসরের মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে পাহাড়ের প্রাণের মেলা।
Comments are closed.