বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে জমজমাট গদখালী ফুলের বাজার
কাকডাকা ভোর থেকেই শুরু হয় হাকডাক। মহাসড়কের দুপাশে বাহারি রঙের ফুল সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন চাষিরা। কেউ ভ্যানে, কেউ বাইসাইকেলে, কেউবা মোটরসাইকেলের পেছনে করে নিয়ে আসেন তাদের ফুল। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরাও। চলছে জমজমাট দর কষাকষি। এ দৃশ্য যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী এলাকার। বিজয় দিবসের আগ মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠেছে এই ফুলের রাজ্য। চাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভালো লাভও মিলবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়- বাজারজুড়ে চোখ যেদিকেই যায়, শুধু ফুল আর ফুল। শীতকে উপেক্ষা করে ফুলচাষিরা নানা রঙের বিভিন্ন জাতের ফুল বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে এসেছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গোলাপ ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরার দাম প্রতিটি ১০-১৫ টাকা। গ্লাডিউলাস প্রকারভেদে ১০-১৮ টাকা। চন্দ্রমল্লিকা প্রতিটির দাম দেড়-আড়াই টাকা। রজনিগন্ধার স্টিক ৮-১২ টাকা। লাল গাঁদার প্রতি হাজার ৩০০ টাকা, আর হলুদ (বাসন্তি) গাঁদার প্রতি হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া জিপসির আঁটি ২০-৩০ টাকা, কামিনি পাতার আঁটি ৫০-১০০ টাকা এবং রথস্টিকের আঁটি ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হাড়িয়া এলাকার ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। এই মৌসুমে খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন। একই এলাকার কলাগাছি গ্রামের গাঁদা চাষি আবুল হোসেন জানান, তিনি আজ বাজারে এনেছেন ৬০ হাজার পিস গাঁদা ফুল। প্রায় ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী মিকাইল হোসেন জানান, তিনি এখন থেকেই ফুল কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বাজারের চাহিদা বাড়ছে। তিনি অন্তত ৬-৭ লাখ পিস ফুল কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাবেন বলে জানান। তার ধারণা, সামনে চাহিদা আরও বাড়বে।
গদখালী ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মঞ্জুর আলম বলেন, এখানকার চাষিরা বিভিন্ন দিবসকে লক্ষ্য করে ফুল উৎপাদন করেন। এবার বাজার ইতোমধ্যেই রমরমা হয়ে ওঠেছে। তাদের আশা, এই মৌসুমে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরু থেকেই চাষিরা বাজার ধরতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফুলচাষে ছত্রাকসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিলে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিও ভালো। সব মিলিয়ে গদখালির চাষিরা এবার ভালোই লাভবান হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.