বাল্যবিয়ে বন্ধ করলে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ!

ঈদ উল আজহা উপলক্ষে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকাবে বিদ্যালয়। এ সময় মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষার্থী যাতে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে ঝড়ে না পরে তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা এসএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- কোনো ছাত্রী তার নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পারলে সে বিনা বেতনে এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের খবর দিলে তারও তিনমাসের বেতন মওকুফ করা হবে।

জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনিবার (২ জুলাই) থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে বাল্যবিয়ের শিকার হয় মেয়ে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার বেড়ে যায়। বাল্যবিয়ের শিকার ও শিক্ষার্থীদের ঝড়েপড়া রোধে তাই এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন এসএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দত্ত।

শনিবার (২ জুলাই) বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার দিনে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, কোনো ছাত্রী তার নিজের বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে পারলে তাকে আর বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার জন্য মাসিক বেতন দিতে হবে না। এছাড়া কোনো ছাত্রী যদি তার গ্রামের কোনো মেয়ের বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন খবর জানাতে পারে তাহলে তার ৩ মাসের বেতন মওকুফ করা হবে।

এদিকে বাল্যবিয়ে রোধে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একজন করে শিক্ষার্থী নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। একটি ক্লাশের দুইজন শিক্ষক নিয়মিত ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। গ্রামের কোনো ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হলেই গঠিত টিম বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।

বিদ্যালয়ে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা বাসিন্দারা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অনেক সহপাঠী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং আমাদের কোনো সহপাঠী যদি বাল্যবিয়ের শিকার হয় তাহলে শিক্ষকদের (স্যার) জানাবো। এতে করে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে মাসিক বেতন যেমন দিতে হবে না অন্যদিকে আমাদের কোনো সহপাঠী বাল্য বিয়ের শিকার হবে না।

ফলদা এসএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা স্কুল বন্ধ থাকলেও ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। এছাড়া ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেই যাতে তারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে ঝড়ে না পড়ে। অভিভাবকরা যাতে তাদের সন্তানদের বাল্যবিয়ে না দেয় সেটার কুফল ও আইন সম্পর্কে জানাই। বিদ্যালয়ে একটি টিমের মাধ্যমে আমরা এই কাজগুলো করি।’

ফলদা এসএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দত্ত বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয় বেশি। বাল্যবিয়ে রোধে বিদ্যালয়ে একটি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ফলদার বিভিন্ন গ্রামে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় অনেকদিন বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে যাতে কোনো শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে ঝড়ে না পড়ে এজন্য দুইটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণাগুলো হল- যে ছাত্রী তার নিজের বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পারবে তাকে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য কোনো মাসিক বেতন দিতে হবে না। এছাড়া যে ছাত্রী তার এলাকায় বাল্য বিয়ে হওয়ার খবর দিতে পারবে তাকেও ৩ মাসের কোনো বেতন দিতে হবে না।’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.