বালেন্দা গ্রামে ১২০ বিঘা জমির ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি

এক মাসে আগেও ‘বালেন্দা’ গ্রামের নাম জানতো না কেউ। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পৌর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের নাম বগুড়া শহরকে ছাপিয়ে পুরো বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।

আর খুব বেশিদিন নেই যখন পুরো বিশ্ব জানবে এই গ্রামের নাম। কারণ এই গ্রামের ১২০ বিঘা জমির বিশাল ক্যানভাস জুড়ে এর মধ‌্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভেসে উঠেছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে স্থান করে নিতে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রামটির ১২০ বিঘা কৃষি জমিতে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ নামে এই চিত্রকর্ম বাস্তবায়নের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ততই গিনেস বুকে পাতায় কর্মযজ্ঞটি স্থান করে নেওয়ার সময় সীমা কমে আসছে।

জানা গেছে, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য দুই ধরনের ধান বেছে নেওয়া হয়েছে। বেগুনি ও সোনালি রং। চীন থেকে এই ধানের জাত আমদানি করা হয়েছে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী এই নিভৃত পল্লীর বালেন্দা গ্রামে ৪০ একর জমি লিজ নেওয়া হয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরি করা হয়। চারা লাগানোর জন্য নির্ধারিত মাঠ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজে ১০০ বিএনসিসি সদস্যের দল নিয়ম করে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে ধানের চারা থেকে গাছে রূপান্তর হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতি বেগুনি এবং সবুজ বর্ণে ফুটে উঠেছে। এরপর ধান হলে রঙ পরিবর্তন হবে। ধান পাকলে অন্য আরেক রঙে ভেসে উঠবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। বর্তমানে সবুজ এবং বেগুনি রঙের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভেসে ওঠার পর থেকে সেখানে চিত্রকর্মটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন আসছেন অনেক দর্শনার্থী। তবে ৪০ একর জমিজুড়ে রোপণ করা ধান দিয়ে আঁকানো জাতির জনকের এই প্রতিকৃতি পূর্ণাঙ্গ দেখতে হলে ড্রোন ক্যামেরা অথবা হেলিকপ্টারের সাহায্য নিতে হবে।

আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে নতুন এই বিশ্বরেকর্ড অর্জন উদযাপন করা হবে। যে কারণে চিত্রকর্মটি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে চলছে কর্মযজ্ঞ। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ বীজতলার মাঝ থেকে আগাছা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কথা হয় জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কুমুত চন্দ্র মাহাত ও উজ্জ্বল মাহাতের সঙ্গে। তারা জানান, জমি পরিচর্যার কাজ করে তারা দিন মজুরি পান প্রতিদিন ৩শ’ টাকা। তবে এই টাকা তাদের কাছে গৌণ। একটা ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস সৃষ্টিতে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার কারণে তারা সিরাজগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলযোগে প্রতিদিন বালেন্দায় আসেন কাজ করতে।

প্রকল্পে লিজ দেওয়া জমির মালিক আঁশগ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমার ছয় বিঘা জমি রয়েছে। আমার জমির মধ্যেই বাংলাদেশের জাতির জনকের প্রতিকৃতি। সেটিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হবে। গিনেস বুকে স্থান পাবে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, দেশ ও আমাদের এলাকার নামও উঠবে, যা কোনো দিন ভাবতেও পারিনি। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’

শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু এটা দেশ ও জাতির জন্য এটি হবে মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। অজোপাড়াগাঁয়ে এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। আর খবরটি পত্রিকার মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে।

চিত্রকর্ম বাস্তবায়নকারী কোম্পানির ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান জানান, এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩০০ মিটার, যা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। কারণ সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল আট লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। তাই এই চিত্রকর্ম সম্পন্ন হলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাবে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গিনেস বুকে স্থান পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.