বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া নারীকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করল গৃহহীন যুবক
এক গৃহহীন যুবককে রাস্তা থেকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস (৩৭) নামের এক নারী। কিন্তু সেই ভবঘুরে যুবক দুই দিন পরই অ্যাডামসকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথে এই ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি অভিযুক্ত ৩৯ বছর বয়সী আপাপলে অ্যাডোমকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস ৩৯ বছর বয়সী আপাপলে অ্যাডোমকে তার সঙ্গে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু পরে তাকে চলে যেতে অনুরোধ করে একটি নোট লিখেছিলেন।
আদালতের নথি্তে বলা হয়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসের ফ্ল্যাট থেকে তর মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ ভাঙচুর ও জোর করে প্রবেশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান যে, ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
ওল্ড বেইলির বিচারপতি নাইজেল লিকলি অ্যাডোমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন এবং কমপক্ষে ২১ বছর জেলে ভরে রাখার নির্দেশ দেন।
বিচারপতি বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসের দয়া এবং ভালো স্বভাবের সুযোগ নিয়ে অ্যাডোম তার বিশ্বাসের চরম অবমাননা করেছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিক্টোরিয়া যখন অ্যাডোমকে চলে যেতে বলেন, তখনই সে এই ‘বর্বর ও হিংস্র’ আক্রমণটি চালায়। বিচার শুরুর আগেই অ্যাডোম হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেছিল।
তদন্তের নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা প্রধান পরিদর্শক ম্যাট ডেনবি বলেছেন: “আমি আশা করি অ্যাডুমের অপরাধ স্বীকারোক্তি ভিক্টোরিয়ার পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য একটি ছোট স্বস্তি।
তিনি আরো বলেন,”এটা একটা দুঃখের বিষয় যে অ্যাডুম তাকে থাকার জায়গা দেওয়ার এবং তার প্রয়োজনের সময় দয়া দেখানোর পরেও তাকে হত্যা করেছিল। ভিক্টোরিয়ার আরও ভালো কিছু প্রাপ্য ছিল।”
ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস ছিলেন চার সন্তানের মা। আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তার খালা ক্যাথি অ্যাডামস বলেন, ‘ভিকি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করত, সে ছিল উদার মনের মানুষ। অন্যদের কাছ থেকে তিনি যে দয়া পেয়েছিলেন, সেটি নিজেও ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন—আর এর জন্য তাকে নিজের জীবন দিয়ে দিতে হলো।’
প্রসিকিউটর আদালতকে জানান, অ্যাডোম গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়। এর দু’দিন পরেই সে ভিক্টোরিয়াকে নির্মমভাবে আক্রমণ করে। প্রসিকিউটর আরও জানান, অভিযুক্তের আগেও সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে দুটি ছুরি এবং একটি স্ক্রুড্রাইভার পাওয়া যায়।
জানা যায়, ভিক্টোরিয়া কেবল অ্যাডোমকে সাহায্য করতেই চেয়েছিলেন এমন নয়। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে বারবার হুমকি দিচ্ছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি অ্যাডোমকে বাড়িতে আনেন। তবে প্রসিকিউটর মন্তব্য করেন, তিনি হয়তো পরে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। কারণ অ্যাডোম হঠাৎ করেই হিংস্র হয়ে ওঠেন। ভিক্টোরিয়া সম্ভবত অ্যাডোমকে ভয় পেতে শুরু করেছিলেন।

Comments are closed.