বাংলাদেশে শিগগিরই পুরো বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করবে আদানি
গরমের চাহিদা মেটাতে কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে ভারতের আদানি গ্রুপ। গত তিন মাস ধরে এই সরবরাহ আংশিকভাবে বন্ধ ছিল। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ভারতীয় বিলিওনিয়ার গৌতম আদানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি গেল ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। কারণ হিসেবে বলা হয় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় বকেয়া পরিশোধে দেরি করছিল বাংলাদেশ।
রয়টার্স জানায়, গ্রীষ্মকালীন চাহিদা শুরুর আগে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অনুরোধে চুক্তির পুরোটা সরবরাহ করবে আদানি।তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিচ্ছে বাংলাদেশ৷ এই সরবরাহ আবার সম্পূর্ণ চালু করার জন্য আদানি পাওয়ারকে বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছিল।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করে৷ তখন থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল আদানি৷ চুক্তির আওতায় প্রতিটি ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের এই কেন্দ্রটি থেকে পুরো বিদ্যুৎই বাংলাদেশে বিক্রি করা হয়৷
তবে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে দাম দিতে দেরি হওয়ায় ভারতীয় কোম্পানিটি ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ অর্ধেক করে দেয়৷ এর ফলে পয়লা নভেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এতদিন প্ল্যান্টটি প্রায় ৪২ শতাংশ উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎই সরবরাহ চালিয়ে যেতে বলে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধের জন্য আদানিকে প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় এক হাজার ২৮ কোটি টাকা) দেওয়া হচ্ছে৷ এখন কোম্পানিটিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও সরবরাহ পুনরায় চালু করতে বলা হয়েছে৷
বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রয়োজন অনুসারে তারা দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর পরিকল্পনা করেছিল৷ তবে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সোমবার তা চালু হয়নি৷ এই মুহূর্তে আমরা প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছি৷ আমরা আরও অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাকি থাকা টাকার পরিমাণ কমানো৷ এখন আদানির সঙ্গে আমাদের কোনও বড় সমস্যা নেই৷
আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্রের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রয়টার্সের অনুরোধের জবাব পাওয়া যায়নি৷ ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল বিপিডিবির কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে৷ বিপিডিবি চেয়ারম্যান অবশ্য তখন জানিয়েছিলেন বকেয়ার পরিমাণ মাত্র ৬৫০ মিলিয়ন ডলার৷
বিদ্যুৎ শুল্ক হিসাবের পদ্ধতি নিয়েই মূলত বিরোধের শুরু হয়েছিল৷ ২০১৭ সালে হওয়া চুক্তিতে দুটি সূচকের গড় হিসাব করে দাম নির্ধারণের ব্যাপারে সম্মতি ছিল৷ কিন্তু রয়টার্স জানিয়েছে, এর ফলে ঢাকায় বিক্রি হওয়া ভারতের বিদ্যুতের গড় দামের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হয় আদানির বিদ্যুৎ৷
বাংলাদেশের একটি আদালত বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটিকে আদানির সঙ্গে করা চুক্তিটি পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে৷ কমিটি এই মাসেই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা৷ এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনাও রয়েছে৷
সরকার থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর সুবিধা পাওয়ার কথা গোপন রাখায় আদানির বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার৷ আদানির এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা বজায় রেখেছে এবং ঢাকা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে এমন ইঙ্গিতও তারা পাননি৷ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য তখনই চুক্তি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল৷
এই বিষয়ে মতপার্থক্য সমাধান হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিপিডিবি চেয়ারম্যান৷
নভেম্বরে ভারতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষকাণ্ডে ভূমিকার অভিযোগে আদানির গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি এবং আরও সাত নির্বাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে, মার্কিন তদন্তসংস্থা৷ আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা করেছে৷
আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা৷ এরপর তার আমলে স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য সেপ্টেম্বরে বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার৷