বাংলাদেশে ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস খুলছে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ঢাকায় ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস খুলছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। ঢাকা ওয়াশিংটনের ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব একটি ভাচ্যুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি, কিথ ক্র্যাখ এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। ওই বৈঠক বিষয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে মুখপাত্রের দপ্তর প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উচ্চ পর্যায়ের এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি যৌথভাবে বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য বিষয়ক যৌথ বিবৃতিতে মোটা দাগে মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে অঙ্গীকারের বিষয়টি ফোকাস করা হয়। এতে বলা হয়, নতুন অর্থনৈতিক কর্মকা- সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডিএ এবং দেশটির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ও চুক্তির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
ঢাকায় প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্যিক সেবা অফিস খোলার আগ্রহকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, শুল্ক প্রশাসন, কৃষি এবং অন্যান্য বাণিজ্য খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আঞ্চলিক সংযোগ এবং বাণিজ্য নীতি ও কর্মপদ্ধতি বিষয়ে সচেতনতা ও স্বচ্ছতাসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এমন একটি ইউএসএআইডি প্রকল্প চলমান রাখায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাধুবাদ জানায় ঢাকা। বিবৃতিতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও দৃঢ়তর বন্ধন বিষয়ে বলা হয়- ৩০ শে সেপ্টেম্বরের ভাচ্যুয়াল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়েরই একটি মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন রয়েছে। যেখানে সকলের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই লক্ষ্য অর্জনে ঢাকা-ওয়াশিংটন একত্রে কাজ চালিয়ে যাবে। বৈঠকের সভাপতিদ্বয় কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাধা-বিঘœ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তারা টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এর মাধ্যমে এই দুই বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো জোরদার করার সদিচ্ছা প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে নিরাপদ অর্থনীতির জন্য জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার তাগিদও দেয়া হয়। বলা হয়, দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নারী- শিশুসহ, জনশক্তি ও সাধারণ জনগণের জন্য অধিকতর সুরক্ষার প্রয়োজন হবে। আর এ জন্য দ্বিপক্ষীয় এবং বৈশ্বিক সহযোগিতাকে আরো জোরদার করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে একটি যৌথ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সেবা দল গঠনের সুপারিশও করা হয়। বলা হয়, দলটি অনতিবিলম্বে এবং পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে বৈঠক করবে; এবং চিকিৎসা শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদারের উপায় খুঁজবে। সেবা দলের তৈরি কৌশল পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। চাহিদা বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ- বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কৌশল পর্যালোচনায় বাংলাদেশ পক্ষ জানিয়েছে, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি বাণিজ্য ও পাট সম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার সুফল বয়ে আনতে পারে। এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও পরিবেশের ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। উভয় পক্ষ মনে করে, এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে সহযোগিতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে যাতে, একুশ শতকের কৃষি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় এবং গ্রাহকের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়। ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট টিকফা কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ পক্ষ আগেই বলেছে, যে দেশের অর্থনৈতিক এলাকাগুলোতে মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগকে ঢাকা স্বাগত জানাবে। প্রতিযোগিতামূলক অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি এবং বীমা বাজার উদারীকরণের মত চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া বিষয়ে অংশীদারদের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ, বর্তমানে সহজলভ্য সকল বিধিমালা ও বিলগুলোর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ এবং উৎসে মুনাফা পাঠানোর ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনসহ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশের অব্যাহত উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারী ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ এবং ন্যায্য ক্রয় প্রক্রিয়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ভূমিকা রাখবে। বিবৃতি মতে, টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন, দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ অর্থায়ন চর্চা এবং সকলের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেরা চর্চাগুলো অনুসরণ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভোক্তাদের নকল বা লাইসেন্সবিহীন পণ্যের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য কার্যকর আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থার গুরুত্বের বিষয়টি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় উঠে এসেছে। আইএলও’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ শ্রম আইন, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আইনসহ শ্রম খাতের সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার তাগিদও দেয়া হয়েছে সাম্প্রতিক বৈঠকে।