বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার: সরকারের প্রশংসায় ইইউ

বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের প্রশংসায় ইইউ
নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া সংস্কারগুলোর প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের যে ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল এতদিন, সেটি ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা করেছেন তারা। বিষয়টি খুবই ‘অ্যাপ্রিসিয়েট’ বলছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বিষয়টি উঠে এসেছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান ইইএএস’র জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সেলোরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে ইইউর চার জন প্রাক-প্রতিনিধি দলের সদস্য এ বৈঠকে অংশে নেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রা লোননাউ, আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিনা দোস রামোস আলভিস, ইইউ ডেলিগেশনের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স ড. ব্রেন্ড স্পানিয়ার এবং ইইউ ডেলিগেশনেরপরিটিক্যাল অফিসার সেবাসটেইন রিগার ব্রাউন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ, বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন, নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়।

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এজন্য তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের অপরিহার্য বিষয়গুলোতে হাত দিয়েছে এবং তা সংস্কার করেছে। এর মধ্যে আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতায় এতদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল, সেটিও ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ দেন তারা।

সফররত প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে মোট ৬৬টি আইন সংস্কার হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই ৫৫টি করেছে। এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বাধীন, টেকসই এবং নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনের আমূল পরিবর্তন রয়েছে। এর মধ্যে এক-এগারোর সরকার ৫টি এবং বাকি সব সরকার মিলে ৬টি আইন সংস্কার করেছে। একটি ফানডামেন্টাল নির্বাচনের জন্য করণীয় সব করেছে আওয়ামী লীগ। একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সরকারের নেওয়া এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল।

এসময় বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্বাচন দেখতে চায় বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল জানায়।

এসময় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল জানায়, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সম্ভব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসময় আগামী নির্বাচন নিয়ে খুবই পজিটিভ ধারণা পোষণ করেন।

বৈঠকে বিরোধী দল বা বিএনপি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে বাস্তবতায় একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, বাংলাদেশে এখন সেই ব্যবস্থা নেই। যে কারণে এসব দাবি করা হয়েছিল, সেগুলো এখন নেই। সব পূরণ হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, পৃথিবীর কোথাও নিখুঁত নির্বাচন ব্যবস্থা নেই। সব দেশ যে সুইজারল্যান্ড হবে না এবং তারা বাংলাদেশের বাস্তবতাও উপলব্ধি করেন। তবে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জহির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.