বাংলাদেশের এই ‘কাঠের বাড়ি’ যাবে ইউরোপে!

বাংলাদেশই তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাঠের বাড়ি। পর্যটকদের থাকার জন্য বোড টিইনি হাউজ নামে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি রপ্তানি হবে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে।

বাগেরহাটে তৈরি এ ঘরের প্রথম চালান শিগগিরই পাঠানোর আশা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাচারাল ফাইবার’র। এর মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন হবে। আগামীতে ইউরোপের বড় বাজার ধরতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন উদ্যোক্তারা।

কাঠমিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। পরে ন্যাচারাল ফাইবারে কাজ করার সুযোগ হয়। প্রথমদিকে বাগেরহাট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মধ্যে কাজ করতাম পরে, এখানে এসেছি। প্রথমদিকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারপর স্যারদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি। ভাবতেই ভালো লাগে, আমাদের তৈরি ঘর বিদেশে যাবে। আবার সেই ঘর ঠিকঠাক মতো সংযোজন করে দিয়ে আসতে আমাদের মতো শ্রমিকদের ইউরোপে পাঠানো হবে। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের।

কারখানায় কাজ করা পূজা নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি। খুবই ভালো লাগে। শুনছি এই ঘর স্থাপনের জন্য কয়েকজনকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হবে। এ ধরনের কাজ আরও থাকলে আমরা খুব ভালো জীবন-যাপন করতে পারতাম।

২০২৪ সালের প্রথমদিকে পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন পণ্য ব্যবহার করে তৈরি করা ১২০টি বসতঘর (বোড টিইনি হাউজ) তৈরির কার্যাদেশ পায় ন্যাচারাল ফাইবার। এরপর পরিবেশবান্ধব বসতঘর তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান। একটি পরিবার থাকতে যা লাগবে সব ধরনের সুবিধা রয়েছে এই বাড়িতে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মেহগনি কাঠ দিয়ে এই ঘর তৈরি করা হচ্ছে। ঘরের ছাদ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য আফ্রিকা থেকে আনা আইপিই বা ইপে নামে এক ধরনের বিশেষ কাঠ ব্যবহার করা হবে। ওপরে পানি প্রতিরোধী প্রলেপ দেওয়া থাকবে। কোনো রং করা হবে না। এছাড়া সবই স্থানীয় গাছ দিয়ে তৈরি হবে। ঘরের একেকটি অংশ আলাদাভাবে ভাগ করে বেলজিয়ামে পাঠানো হবে। ন্যাচারাল ফাইবারকে ঘর তৈরির কাজে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে গ্রিসের প্রতিষ্ঠান ‘কোকো-ম্যাট’ ও বেলজিয়ামের ‘নোই বিল্ডার্স’। এর মধ্যে ‘কোকো-ম্যাট’ ন্যাচারাল ফাইবারের পুরোনো ক্রেতা। ন্যাচারাল ফাইবারের তৈরি নারকেলের ছোবড়ার ডিসপোজেবল হোটেল স্লিপার, কাঠের বেবি ব্যালান্স সাইকেল, সান বেড, পোষা প্রাণীর বিছানা, খেলনাসহ নানা পণ্যের ক্রেতা বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানটি।

ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালটেন্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন বলেন, আমরা এর আগে যত পণ্য পাঠিয়েছি, সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঠিয়েছি। এই ঘরগুলো যদি মোংলাবন্দর দিয়ে পাঠাতে পারতাম, তাহলে আমাদের সময় ও অর্থ কিছুটা বাঁচত।

মোল্লা শাহিন আরও বলেন, ‘বোট টিইনি হাউস’ নামে এই ঘর বানানোর জন্য ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে আমরা কাজ পেয়েছি। এ জন্য প্রথম নমুনা ঘরটি তৈরি করতে হয়েছিল। এর আগে বেলজিয়ামের ওই পার্কে হাতি চলাচলের করিডর ও বেড়া দেওয়ার ৪ শতাধিক খুঁটি তৈরির কাজ পেয়েছিলাম। প্রথম চালানে ১৬২টি খুঁটি পাঠানো হয়েছে। খুঁটির কাজে পার্ক কর্তৃপক্ষ খুব খুশি হয়েছেন। এজন্য তারা ঘর তৈরির কাজ দিতে আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন।

বিসিক বাগেরহাটের শিল্পনগরী কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন, মুস্তাফিজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি করছেন। এই কাঠের ঘর বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। আমরা তার কারখানা ঘুরেছি, খুবই নিপুণভাবে কাজ করা হয়। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ছোট পরিসরে পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.