বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালমুখী র্যাম্পের পিলারে বড় ফাটল
চট্টগ্রাম নগরের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের (উড়াল সেতু) বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালমুখী র্যাম্পের দুটি পিলারে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটলের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে গত সোমবার রাত ১১টার পর থেকে র্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল মঙ্গলবার ব্যস্ততম আরাকান সড়কসহ বহদ্দারহাট এবং আশপাশে বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রীরা দিনভর পড়েন অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।
স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ এসসারুল হক জানান, উড়াল সেতুর দুটি পিলারে ফাটলের ঘটনাটি গত সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফাটলের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই রাত ১১টা থেকে র্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উড়াল সেতু ও র্যাম্প প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা র্যাম্প নির্মাণে ডিজাউন করেছিলেন তাঁদের ডেকেছি। পিলারে ফাটলের বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বসে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র (চসিক) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। ফাটলের ব্যাপারে মেয়র বলেন, ‘ফ্লাইওভারে যেভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে, যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ফাটল দেখে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। আমি তো প্রকৌশলী না। প্রকৌশলীরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে ধারণা করছি, নির্মাণজনিত ত্রুটির কারণে এই ফাটল দেখা দিয়েছে।’ মেয়র আরো বলেন, ‘যাঁরা কনস্ট্রাকশন (সিডিএ) করেছেন এবং কী কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে তা তদন্ত করে বের করা যাবে। আমরা সিডিএকে আজই (গতকাল) চিঠি দেব। কারণ উনাদের তত্ত্বাবধানে এ কাজটা (র্যাম্প নির্মাণ) হয়েছে। উনারা ব্যবস্থা নেবেন।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ছাড়া প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গেও মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনিও ফোন ধরেননি।
উড়াল সেতুর একমাত্র এই র্যাম্পটি তিন বছর ১০ মাস আগে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, উড়াল সেতুর মূল নকশা পরিবর্তন করে র্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়। এ নিয়ে ওই সময় বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। র্যাম্পের একাধিক পিলার স্থাপন করা হয়েছিল নালার ওপর। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ ও ৬.৭ মিটার প্রস্থের র্যাম্পটি নির্মাণের পর ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর সেটি চালু হয়। ওই দিন থেকে মূল উড়াল সেতু দিয়ে ওই র্যাম্পেও (এম এ মান্নান উড়াল সেতুর বর্ধিতাংশ) যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে র্যাম্প নির্মাণ প্রকল্পটি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নগরের চারটি উড়াল সেতুই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ।
গতকাল ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল উড়াল সেতু থেকে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্পের দুটি পিলারের চতুর্দিকে বড় ফাটল। এর মধ্যে মূল উড়াল সেতু থেকে নামতে বাম পাশে (বহদ্দারহাট মোড়ের স্বজন সুপার মার্কেটের পাশে) দ্বিতীয় পিলার এবং এক কিলোমিটার এলাকা থেকে আরাকানমুখী অপর প্রান্ত (র্যাম্পে যুক্ত) থেকে নামার দিকে প্রথম পিলারেরও চারদিকে ফাটল। আরাকানমুখ ও মূল উড়াল সেতু থেকে নামার দুই পথে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তবে মূল উড়াল সেতুতে যানবাহন চলাচল অব্যাহত আছে।