বর্ষায় স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাক
শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। আকাশে হঠাৎ মেঘ– একটু পরেই রোদের খেলা। ভ্যাপসা গরম, আবার একটু পরেই এক পশলা বৃষ্টি। কখনও একটানা ঝরঝরে বৃষ্টি। গরম হোক কিংবা বৃষ্টি– ঘরে তো আর বসে থাকা যায় না। অফিস, বন্ধুদের আড্ডা কিংবা দাওয়াত থাকলে তো বের হতেই হয়। যারা ফ্যাশনপ্রেমী তারা মেঘাচ্ছন্ন কিংবা বৃষ্টিমুখর দিনেও নিজেদের স্টাইলের ব্যাপারে থাকেন সচেতন। তাদের কাছে বর্ষা মানে শুধু বৃষ্টি নয়, বরং আরাম, রং আর বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলা।
ষড়ঋতুর এই দেশে প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় সাজগোজের ধরনও। অনেক ফ্যাশনপ্রেমীর কাছে বর্ষা প্রিয় ঋতু। কারণ এ সময়টায় পোশাক পরার ক্ষেত্রে আবহাওয়ার দিক থেকে অনেকটা স্বস্তি মেলে। তবে বর্ষার দিনে পোশাক নির্বাচন শুধুই স্টাইলের জন্য নয়, দরকার ব্যবহারিক দিকটাও মাথায় রাখা। এ সময় ভেজা রাস্তা, কাদা ও হঠাৎ বৃষ্টি যেন সবসময়ই প্রস্তুত আমাদের চমকে দেওয়ার জন্য। তাই প্রয়োজন এমন পোশাক, যা আরামদায়ক, সহজে শুকায়, আবার দেখতেও ফ্যাশনেবল।
বর্ষায় কেন ভিন্ন পোশাক দরকার?
বর্ষাকাল মানেই কখনও ঠান্ডা, কখনও ভ্যাপসা গরম আর মাঝেমধ্যে টানা বৃষ্টি। সকালে রোদ থাকলেও বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি এসে সব ভিজিয়ে দেয়। ভারী কাপড় ভিজে গেলে তা শুকাতে সময় নেয় এবং পরতেও অস্বস্তি হয়। আবার হালকা পোশাক না হলে গা ঘামে বা কাদা লেগে যায়। তাই বর্ষার জন্য এমন পোশাক দরকার, যা হালকা ও আরামদায়ক, দ্রুত শুকায়, সহজে পরিষ্কার হয়, দাগ লুকাতে পারে এবং দেখতে ট্রেন্ডি।
কোন ধরনের কাপড় সবচেয়ে ভালো?
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার কাপড়ের গঠনে। সুতি কাপড় খুব আরামদায়ক হলেও বর্ষায় এড়াতে পারলে ভালো। কারণ এ কাপড় ভিজে গেলে সহজে শুকায় না। বরং এ সময় পলিয়েস্টার, সিনথেটিক, রেয়ন, নাইলন বা ব্লেন্ডেড ফেব্রিক সবচেয়ে কার্যকর। এ কাপড়গুলো হালকা, দ্রুত শুকায় এবং শরীরেও আরামদায়কভাবে বসে যায়।
ফিটিং ও রঙের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
বর্ষায় একদম টাইট পোশাক না পরাই ভালো। কারণ ভিজলে তা শরীরে লেপ্টে যায়। আবার অতিরিক্ত ঢিলেঢালা পোশাক রাস্তায় চলতে গেলে কাদায় আটকে যেতে পারে। তাই মাঝারি ফিট বা আধা আঁটসাঁট পোশাকই বেশি আরামদায়ক।
রঙের দিকেও নজর দিন। হালকা রঙে দাগ পড়লে তা সহজে ওঠে না। ভিজলে হালকা রঙের পোশাক স্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। তাই বর্ষায় ডার্ক শেড যেমন– গাঢ় নীল, ধূসর, বাদামি, কালো, গাঢ় সবুজ ইত্যাদি রং বেশি মানিয়ে যায়।
নারীর জন্য বর্ষার ফ্যাশন
বর্ষায় মেয়েদের ফ্যাশন মানেই স্বস্তি আর স্টাইলের মিশেল। কুর্তি-লেগিংস, পালাজো, শর্ট টপস অথবা ফিউশন পোশাক এ সময় আরামদায়ক ও ট্রেন্ডি। পাতলা সিনথেটিক ওড়না বেছে নিন, যা দ্রুত শুকায়।
অফিসে যাতায়াত করা নারীর জন্য হালকা রেইনকোট বা ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট অত্যন্ত কার্যকর। যারা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন, তারা জর্জেট, সফট সিল্ক, আর্টিফিশিয়াল শিফন পরতে পারেন। এ শাড়িগুলো হালকা ও সহজে শুকায়। তবে কটন বা তাতের শাড়ি ভিজে গেলে খুব ভারী হয়ে যায়। তাই সেগুলো বর্ষায় এড়িয়ে চলাই ভালো।
বর্ষায় কিছু বাড়তি পরামর্শ
বর্ষাকালে শুধু পোশাক নয়, কিছু বাড়তি সচেতনতাও জরুরি। বাইরে বের হলে ছাতা বা রেইনকোট রাখুন। ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ব্যবহার করুন। প্লাস্টিক বা পানি সহনশীল জুতা পরুন। ভিজে গেলে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করুন। মাথা ও পা শুকনো রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষা শুধু ভিজে যাওয়া নয়, অনুভব করার ব্যাপার। তেমনি এ সময়ে পোশাক শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, আরাম, যত্ন ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যও জরুরি। ভেজা জামাকাপড় থেকে সর্দি-কাশি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তাই এমন পোশাক নির্বাচন করুন, যা আরাম দেয়, সহজে শুকায় আর দেখতে সুন্দর। আপনি যেমন থাকবেন স্বস্তিতে, তেমনি স্টাইলও থাকবে বজায়।

Comments are closed.