বর্তমানে মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে

সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বলতে দেশের সব মানুষের জন্য স্বল্প খরচে গুণগত মানের প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাকে বুঝায়। সেক্ষেত্রে দেশের সকল জনগণের জায়গায় বর্তমানে মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ নামমাত্র বেড়েছে। জিডিপির শতাংশের হিসেবে বরাবরের মতোই তা এক শতাংশের নীচে। করোনাকালে স্বাস্থখাতে বরাদ্দ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয় নি। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই ভুক্তভোগী হচ্ছেন।বেসরকারি খাতকে মনিটরং এর জন্য পৃথক কাঠামো গঠন এবং সেই কাঠামো থেকেই তাদের রেজিষ্ট্রেশন এবং মনিটরিং করা প্রয়োজন।

সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের মূল বাধাটি সরকারের মধ্য থেকেই আসছে। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদশের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র হালনাগাদ করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

রোববার (১৩ জুন) রাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জনগণের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় এবারের বাজেট কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে?’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব মতামত ব্যক্ত করেন।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সুইডেনের গোথেনবার্গ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর খান সোহেলের সঞ্চালনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং বাংলাদেশ হেল্থ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামকে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক হামিদ বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বলতে বুঝায় সবার জন্য স্বল্প খরচে গুণগত মানের প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন গবেষণা এবং জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের সকল জনগণের জায়গায় আমরা এখন মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছি।

গতবারের তুলনায় এবার বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ খুবই অল্প পরিমাণে বেড়েছে জানিয়ে ড. রুমানা বলেন, জিডিপির শতাংশের হিসেবে তা সবসময়ই এক শতাংশের নীচে ছিল, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং, করোনাকালে স্বাস্থখাতে বরাদ্দ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয় নি। ধন্যবাদ পাবার মতো কিছু দিক থাকলেও সবমিলিয়ে এটা হতাশাজনক। করোনা মোকাবিলার জন্য কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়নের সঠিক বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্যান্য মন্ত্রণালয় কিভাবে এই খাতের অর্থ খরচ করবে তার নির্দেশনা বরাবরের মতোই অনুপস্থিত। দু-একটি বিষয় বাদ দিলে এবারের বাজেট একেবারেই গতানুগতিক।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দিনের পর দিন তাকে দেয়া বাজেট ব্যবহার করতে পারছে না এই অজুহাতে কি তাকে অল্প বরাদ্দ দেয়া হবে? নাকি কেন তারা সেটা ব্যবহার করতে পারছে না তার অনুসন্ধান করা হবে?

দেশের একটি বড় অংশের জনগোষ্ঠী যেহেতু বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার উপর নির্ভরশীল সেক্ষেত্রে সরকার তাদের কাছ থেকে আপদকালে সেবা কিনে নিতে পারে। এক্ষত্রে তিনি করোনা টেস্টের উদাহরণ টানেন। বেসরকারি খাতে দরিদ্রদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে সরকার তাদের সাহায্য করতে পারে। এভাবে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ন্ত্রণ এবং দেখভাল করতে পারে।

দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে চমৎকার অবকাঠামো রয়েছে মন্তব্য করে তৌফিক মারুফ বলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিতে সব ধরনের মানুষ বেশি উৎসুক হলেও নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই সেখানে ভুক্তভোগী হচ্ছেন। সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অনুমোদন দিয়েই শেষ। তারা মান নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা তা নিয়েও তেমন মনিটরিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি খাতকে মনিটরং এর জন্য পৃথক কাঠামো গঠন করা এবং সেই কাঠামো থেকেই তাদের রেজিষ্ট্রেশন এবং মনিটরিং করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতির অনেক খবর বের হলেও গুটিকয়েক ছাড়া বাকিদের জবাবদিহিতা বা শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। এছাড়া সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের মূল বাধাটি সরকারের মধ্য থেকেই আসছে। অনেকে এটা বুঝতে পারছেন না। আমার অনেকে বুঝেই এটা বাস্তবায়ন করছেন না এই ভেবে যে, সেক্ষেত্রে তাদের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে।

এছাড়া ড. রুমানা বাজেট তৈরীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সমন্বয়ের প্রতি গুরুত্ব দেন, যা তৌফিক মারুফও জোড়ালোভাবে সমর্থন করে এ সম্পর্কে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অধ্যাপক হামিদ স্বাস্থ্যের সরকারি খাতকে মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বক্তাগণ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য বাংলাদশের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র হালনাগাদ করার প্রতি গুরুত্ব দেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.