বরগুনায় মাজারে হামলা-আগুন, বৈঠকখানা ভস্মীভূত, আহত ২০

বরগুনার আমতলীতে ইসমাইল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরসে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে মাজারের ভিতরের সামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা ভস্মীভূত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

হামলায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নাম এসেছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রবিবার মধ্যরাতের পর মাজারে হামলার ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

আহতদের মধ্যে সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মো. মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিমকে (২৭) আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, ইসমাইল শাহের মাজারটি স্থাপন করা হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতি বছর এই মাজারে দুইদিনব্যাপী ওরস হয়। রবিবার সন্ধ্যায় পাঁচশতাধিক ভক্তকে নিয়ে ২৮তম ওরস শুরু হয়।

রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী এসে ওরস বন্ধ করতে বলেন। মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রতিবাদ জানালে তাদের মধ্য বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা মাজারে হামলা চালিয়ে আগুন দেন।

খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে দমকল কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে এসে মাজারে হামলা চালায় এবং আগুন দেয়। এতে মাজারের ভিতরের গিলাফ এবং দুটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। তারা ভক্তদেরকে মারধর ও মাজারের বাক্সে থাকা টাকা লুট করেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, ‘ওমর ফারুকসহ বেশ কিছু সমর্থক গিয়ে মাজারে খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে মাজারে পূজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তা মানেননি। মাজারের ভক্তরা ওমর ফারুকের গায়ে হাত তুলে। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর করে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা ওমর ফারুক জেহাদীর ভাষ্য, ‘মাজারটি ভণ্ডের আস্তানা। এখানে ওরসের নামে গানবাজনা ও মাদক সেবনের আসর বসে। আমরা মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে রমজান মাসে এসব থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তার নির্দেশে ভক্তরা আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে।’

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আমতলী ফায়ার ষ্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুইটি ঘর পুড়ে গেছে।

আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.