
ববি উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভেঙে বিক্ষোভ, সিন্ডিকেট সভা বাতিল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বাসভবনে ঢুকে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় উপাচার্য বাসভবনে ছিলেন। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে উপাচার্যের বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করলে শিক্ষার্থীরা ওই সভা বাতিল করার দাবি তোলেন। শিক্ষার্থীদের হট্টগোলে পরে সভাটি স্থগিত করে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের ওই অংশ শুক্রবার দুপুরে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে দুই শিক্ষক প্রতিনিধিকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে এবং পাতানো সিন্ডিকেট প্রতিহত করার ডাক দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে তারা নানা স্লোগান দেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘শুক্রবার বিকালে উপাচার্য যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন, তাতে কোনো এজেন্ডা নেই। নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি কোনো গোপনীয়তার সঙ্গে এই সভা আহ্বান করেছেন। আমরা এই সিন্ডিকেট সভা মানি না।’
এ সময় উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন সহকারী প্রক্টর মারুফা আক্তার। মারুফা আক্তার শিক্ষার্থীদের জানান, সিন্ডিকেট সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অত্যন্ত গোপনীয় সভা। এবারের সভায় নতুন করে তো কোনো এজেন্ডা আসবে না। কোনো ফ্যাসিস্টকে সিন্ডিকেট সদস্য বা অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
এ সময় সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রক্টর কার্যালয়ে আলোচনায় বসার জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তারা উপাচার্যের সঙ্গে তার বাসভবনেই কথা বলতে চান।
শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টরকে বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২২ দফা দাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আপনারা পাতানো সিন্ডিকেট দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন। আমরা পাতানো সিন্ডিকেট মানি না। আমরা অযোগ্য প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যেরও পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন। পরে উপাচার্যের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন ওই শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম বিল্লাহ, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, মাইদুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আশরাফুল মোল্লা, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, আবদুল করিম, মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।ছবি: সংগৃহীত
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দোসররা ক্যাম্পাসে অবাধে বিচরণ করছে। যারা জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। উপাচার্যের দায়িত্ব ছিল ক্যাম্পাসকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করা। কিন্তু তিনি তা করেননি। এমনকি শিক্ষার্থীদের কোনো চাওয়াই পূরণ করতে পারেননি। বরং উপাচার্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ও তার সহযোগী রেজিস্ট্রারকে বহাল রেখেছেন।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাতানো সিন্ডিকেট ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমরা শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছি। আমাদের ১০ দফা দাবি মেনে না নিলে ও সঠিক ব্যাখ্যা না দিলে আমরা এক দফা দাবিতে যেতে বাধ্য হব। আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় রোববার থেকে আমরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’