বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগা খান স্কুল
৩৩ বছরের পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগা খান স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ‘আগা খান এডুকেশন সার্ভিস’ বিদ্যালয়টি গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৬ জুন তারা দুই ধাপে বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকটা আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টি বন্ধ না করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ২ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, আগা খান স্কুল বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা আগা খান স্কুল দক্ষতার সঙ্গে ক্যামব্রিজ পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে সুনাম কুড়িয়েছিল। বিশেষত দক্ষ শিক্ষক ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠানটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গত ১৬ জুন এক অনলাইন সভার মাধ্যমে এবং পরে ই-মেইল করে অভিভাবকদের আগামী বছর থেকে দুই ধাপে বিদ্যালয়টি বন্ধ করার কথা জানায়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ক্যামব্রিজ কারিকুলাম ছেড়ে তারা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট (আইবি) কারিকুলামে যাচ্ছে। এ কারণে তারা আগা খান স্কুল বন্ধ করে দিয়ে আগা খান একাডেমি চালু করতে যাচ্ছে। স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীরা চাইলে নতুন এ একাডেমিতে ভর্তি হতে পারবে।
ক্যামব্রিজ কারিকুলাম কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত হয়। সব শিক্ষার্থী অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়। তাদের পরীক্ষার খাতার মূল্যায়নও হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। আইবি কারিকুলাম সুইজারল্যান্ডের আইবি ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত হয়। তবে ‘ও’ লেভেলে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো পরীক্ষা হয় না। স্ব স্ব স্কুল নিজেদের মতো পরীক্ষা নেয়।
শাহ আশফাকুল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক জানান, ক্যামব্রিজের তুলনায় আইবি কারিকুলাম অনেক বেশি ব্যয়বহুল। তা ছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি ব্র্যাক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে না। এমনকি ইউরোপের অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও আইবি কারিকুলামের ডিগ্রি গ্রহণ করা হয় না।
জানা গেছে, আগা খান এডুকেশন সার্ভিস বাংলাদেশ আইবি কারিকুলাম চালু করে আগা খান একাডেমি নামে রাজধানীর বসুন্ধরায় নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছে। তারা জনিয়েছে, বর্তমান শিক্ষার্থীদের বসুন্ধরায় নির্মিতব্য আগা খান একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। এই একাডেমি পরিচালিত হবে আইবি কারিকুলামের অধীনে। বর্তমান স্কুলের তুলনায় একাডেমিতে শ্রেণিভেদে টিউশন ফি তিন থেকে চার গুণ হবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রথম ধাপে গ্রেড সিক্স পর্যন্ত এবং ২০২৩ সালে দ্বিতীয় ধাপে সেভেন গ্রেড থেকে বাকি শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগা খান একাডেমিতে প্রথম ধাপে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫০-এ উন্নীত করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে লেখা অভিভাবকদের চিঠিতে বলা হয়, আইবি কারিকুলামের ব্যয়বহুল পদ্ধতি আগা খান স্কুলের অভিভাবকদের সাধ্যের বাইরে। এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষে দুরুহ। করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভে অভিভাবকদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা এবং কারণ দর্শানো ছাড়াই স্কুল কর্তৃপক্ষের এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত শুধু যে অভিভাবকদের উদ্বেলিত করেছে, তা নয়; কোমলমতি শিশুদের করেছে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও মানসিকভাবে বিপন্ন। আমাদের সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত করতে চাই না। বিদ্যালয়টি বন্ধ না করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ চেয়ে অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, দেশের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে আপনার সুচিন্তিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন তাদের বর্তমান পাঠ্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
এসব বিষয়ে জানতে আগা খান শিক্ষা সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালিমা কাশেমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে আগা খান শিক্ষা সার্ভিস বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আমিন সালেহ বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আমরা অভিভাবকদের কথা শুনছি এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। তার পর একটি সিদ্ধান্তে যাব।