ফের ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ, ‘আধুনিক ঢাকা’ স্বপ্নেই
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আবার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আগামী ১০ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পেলে যা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজউকের এই উদ্যোগ লাভবান করবে আবাসন ব্যবসায়ীদের। ফলে আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রয়াস স্বপ্নই থেকে যাবে। রাজধানীবাসীর কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সুবিধাও থাকবে অধরা।
অপরিকল্পিত নগরায়ণে ঢাকা এখন দুর্ভোগের নগরী। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০২২-২০৩৫ সময়ের জন্য প্রণয়ন করেছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ। তবে শুরু থেকেই এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তিতে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এই বিরোধিতা বাসযোগ্য ঢাকা নির্মাণে অন্তরায় বলে অভিমত নগরবাসীর।
রাজধানীবাসী বলছেন, বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা বসবাসের অনুপযোগী। দুটি ভবনের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণও জায়গা থাকে না। এতে ভবনে আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার সুযোগ না থাকায় অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকছে। জায়গার অভাবে খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না শিশুরা।
নতুন পরিকল্পনায় যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। বরং এলাকা ভিত্তিক ফার বা ফ্লোর এরিয়া রেশিও ঠিক করে দিয়েছে রাজউক। যে এলাকায় ফার যত বেশি, ভবনের উচ্চতাও ততো বেশি। তবে আবাসন ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে ড্যাপ সংশোধনে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকারি সংস্থাটি। বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ফারের মান ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা।
আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবি অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার দোহাই দিয়ে অনেক এলাকায় ভবনের আয়তন ও উচ্চতা কম দেয়াটা অযৌক্তিক। বিধিমালা দিয়ে ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমানো হলে আবাসন সংকটে পড়বে ঢাকা। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক মো. আইয়ুব আলী বলেন, আগে ১০ কাঠা জায়গায় ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যেত, এখন সেখানে মাত্র ২০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যায়।
রাজউক বলছে, যানজট, পরিবেশ ও আবাসন সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়েই করা হচ্ছে নতুন সংশোধনী।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ১০ মার্চ ড্যাপের খসড়া উপস্থাপনের কথা রয়েছে। সভায় কোনো সংশোধনী এলে সেটি সংশোধন করে পরবর্তীতে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
এই উদ্যোগের সমালোচনা করে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাসিল করবে। ঝুঁকির মুখে ফেলবে ঢাকা মহানগরীকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভারবহন ক্ষমতা থেকে ৪-৫ গুণ বেশি মানুষ ঢাকায় বাস করেন। এ পরিস্থিতিতে আরও নতুন ভবন নির্মাণ করে মানুষের বসবাসের সুযোগ তৈরি হলে ঢাকা ঝুঁকির মুখে পড়বে। তখন কোনো বিনিয়োগ করেই এটি ঠিক করা যাবে না।