ফেভিপিরার ট্রায়ালে ৯৬% রোগী সুস্থ বলে দাবি বিকনের
করোনায় আক্রান্ত মৃদু ও মাঝারি রোগীর চিকিৎসায় বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘ফ্যাভিপিরাভি’র ওষুধের সংক্ষিপ্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯৬ ভাগ রোগীর সেরে ওঠার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে কোম্পানিটি।
রাজধানীর ৪টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের ওপর পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১০ দিনের ওষুধ সেবনেই ৯৬ ভাগ রোগী ভালো হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি (বিএসএ) এ ট্রায়াল পরিচালনা করে।
বুধবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সেমিনারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহাযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ গোলাম মগ্নি মওলা।
তিনি এ সময় বাংলাদেশের হাসাপাতালসমূহে করোনা রোগীদের ওপর ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা শীর্ষক সেমিনারে এ সংক্রান্ত তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। সেমিনারের আয়োজন করে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
সেমিনারে জানানো হয়, ফ্যাভিপিরাভির হল ওষুধটির জেনেরিক নাম। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত ওষুধের ব্র্যান্ড নাম ‘ফ্যাভিপিরা’। এই ওষুধটি জাপানে ফুজি ফিল্মের সহযোযোগী প্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল কোম্পানি প্রথম উদ্ভাবন করে। তারা ‘অ্যাভিগান’ নামে বাজারজাত করছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর চীনের উহানে করোনা রোগীদের ওপর এই ওষুধের প্রথম ট্রায়াল হয়। পরে রাশিয়া এবং ঢাকায় স্বল্প সংখ্যক রোগীর ওপর ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়। এই দুই দেশের মতো ঢাকা ট্রায়ালে এই ওষুধের অভীন্ন কার্যকারিতা লক্ষ করা গেছে।
তথ্যচিত্রে ডা. সৈয়দ গোলাম মগ্নি মওলা বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের চারদিনের মাথায় ৪৮ শতাংশ এবং ১০ দিনের মাথায় ৯৬ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেছেন এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষায় এসব রোগীদের শরীরে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। ট্রায়াল চলাকালে প্লাসেবা গ্রুপের (যাদের বিকল্প ওষুধ দেওয়া হয়, বাস্তবে সেগুলোতা ওষুধ নয়) ক্ষেত্রে এই হার ছিল চারদিনে শূন্য শতাংশ এবং ১০ দিনে ৫২ শতাংশ। বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারীদের চেয়ে এই ওষুধে রোগীর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা তিনগুণ উন্নতি হয়েছে।
সেমিনারে বলা হয়, যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ নন বা কোনো লক্ষণ নেই, তারা এই ওষুধ খাবেন না। এই ওষুধটি শুধু তারাই খাবেন যারা আরটিপিসিআর পজিটিভ এবং মৃদু বা মাঝারি আকারে আক্রান্ত। তবে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কার্যকর নয়।
দেশের ৪টি হাসপাতালের ৫০ জন কোভিড রোগীর ওপর এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ৪টি হাসপাতাল হলো- কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সেমিনারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ওষুধটি কার্যকর কিনা তা জানতেই বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ঢাকা ট্রায়াল’। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের নিয়ম মেনেই ডাবল ব্লাইন্ড প্লেসবো কন্ট্রোলড পদ্ধতিতে এই ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে।
সেমিনারে উপস্থিত থেকে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বিএম আবদুল্লাহ বলেন, মাত্র ৫০ জনের ওপর পরিচালিত এই ষ্টাডিকে ফাইনাল বলা যাবে না। ঢাকার বাইরে আরও বড় আকারের ট্রায়াল সম্পন্ন করে তারপর চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে পরিস্থিতির বিবেচনায় এই স্বল্প পরিসরে পরিচালিত ট্রায়ালের ওপর ভিত্তি করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা যেতে পারে।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বিএমসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম প্রমুখ।
তারা বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিস্কার হয়নি। মারাত্মকভাবে সংক্রমিত রোগীদের জন্য রেমডেসিভির থাকলেও মৃদু ও মাঝারি রোগীদের জন্য কোনো ওষুধ নেই।
ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে করোনো রোগীদের ক্ষেত্রে এটির ভালো ফল পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর ২৮টি দেশে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এই ওষুধটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে এটি ব্যরহার না করাই ভাল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিকন কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনারোগীদের চিকিৎসায় ওষুধটির ৪০ থেকে ৫২ ডোজ লাগতে পারে। প্রতি ডোজ ওষুধের দাম ৪শ’ টাকা। সেই হিসাবে রোগীপ্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন। তবে এই ওষুধটি কোনো ওষুধের দোকানে বা ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে না। তাই চাইলেও এই ওষুধটি কেউ কিনে বাসায় মজুদ করতে পারবে না।