‘ফখরুলের বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে’
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের এ ধরণের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেশবাসীকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতা এ ধরণের মন্তব্য করতে পারেন না।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, বৃহস্পতিবার এক অনলাইন আলোচনায় মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আনা। ওয়ান-ইলেভেন থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ তার এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট, ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধানগুলো বের করে এবং এর মৌলিক বিধান অক্ষুণ্ন রেখে বাংলায় আলাদা একটি আইন করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনটিতে দেখা যায়, ইতোপূর্বে ব্যবহৃত অধিকাংশ ইংরেজি ও বিদেশি শব্দের পরিবর্তে ‘বাংলা শব্দ’ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভূক্তির যে বিধান আরপিও-এ সন্নিবেশিত রয়েছে, সে বিধানটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণের জন্যই এই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই বিধান সর্বতোভাবে কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
‘করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অবস্থায়ও নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচন করতে চাইছে’- মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব এখতিয়ার। এতে আওয়ামী লীগের কিছু বলার বা করণীয় নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের স্টেকহোল্ডার হিসেবে আওয়ামী লীগ জানতে পেরেছে, মূলত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই নির্বাচন কমিশন করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও উপনির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগই সেখানে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই নির্বাচন করছে, এটি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে আওয়ামী লীগের কী-ইবা করণীয় আছে!
কাদের বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পৃথিবীর অনেক দেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ায় নির্বাচন হয়েছে। ফ্রান্সে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে।
‘ইসি বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে, সেনাবাহিনীকে অকার্যকর করেছে’- বিএনপি মহাসচিবের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এ কথাগুলো বলে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন, তা বোধগম্য নয়। সেনাবাহিনীকে কীভাবে অকার্যকর করা হলো? সেনাবাহিনীর মত রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা একটি জাতীয় বাহিনীকে নিয়ে এ ধরণের আপত্তিকর, দূরভিসন্ধিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য থেকে সবার বিরত থাকা উচিত। এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে গর্বিত সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুলের কথায় মনে হচ্ছে, এদেশে ততদিন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই বিএনপির দৃষ্টিতে নিরপেক্ষ বিবেচিত হবে না, যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার কোন গ্যারান্টি না দেবে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি সে ধরণের একটি ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ চাচ্ছে।
‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে খালেদা জিয়াকে জেল খাটতে হয়েছে, তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে’- মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ফৌজদারি আইনের অধীন দেশের প্রচলিত আদালতের বিচারে প্রথমে অভিযুক্ত ও পরে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের আইনি ব্যবস্থায় কেউই আইনের উর্ধ্বে নন। বরং আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ মানবিক কারণে সরকারের সর্বোচ্চ আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠায়নি। এদেশে ‘দুর্নীতির প্রতিভূ’-খ্যাত ফ্রাঙ্কেস্টাইন তারেক জিয়া ওয়ান-ইলেভেন সরকারের কাছে ‘আর কখনও রাজনীতি করবো না’- এ মর্মে মুচলেকা দিয়ে ও তাদের কাছে মাফ চেয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশত্যাগ করেছিল। তার এই তথাকথিত নির্বাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। তবে তারেক জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, যার কয়েদী হিসেবে জেলে থাকার কথা। সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।