পোশাক রপ্তানিতে ফের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ
করোনা মহামারিতেও পোশাক রপ্তানিতে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটেও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা ২০২২-এ দেখা যায়, বাংলাদেশ ২০২১ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজারে আবারও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ২০২০ সালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে তৃতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানিতে ভিয়েতনামের অংশ ২০২০ সালের ৬.৪০ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৫.৮০ শতাংশে নেমে গেছে। বাংলাদেশের হিস্যা ২০২০ সালের ৬.৩০ শতাংশ থেকে গত বছর ৬.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই অনুপাত ২০১৯ সালে ৬.৮০ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ছিল ৬.৪০ শতাংশ।
ডাব্লিউটিওর পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি দৃঢ়ভাবে বেড়েছে এবং বার্ষিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ২০২০ সালে এই রপ্তানি একটি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছিল এবং ভিয়েতনামের আরএমজি রপ্তানির ৭ শতাংশ বৃদ্ধির বিপরীতে বাংলাদেশে ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।
বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৪.২০ শতাংশ, তখন ভিয়েতনামের অংশ ছিল ২.৯০ শতাংশ।
২০২০ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে চীনের অংশ ৩১.৬০ শতাংশ থেকে গত বছরে ৩২.৮০ শতাংশে উন্নীত করে প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে।
ডাব্লিউটিওর প্রকাশনা অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরএমজির দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ব রপ্তানিকারক। সুতরাং প্রযুক্তিগতভাবে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ব আরএমজি রপ্তানিকারক দেশ এবং ভিয়েতনাম চতুর্থ। ইইউয়ের সম্মিলিত রপ্তানি পরিসংখ্যান দেশভিত্তিক আলাদা করা হলে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক হবে। তুরস্ক ও ভারত পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে; এরপর রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও পাকিস্তান।
ডাব্লিউটিওর পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারকের বার্ষিক মোট রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের ৩৭৮ বিলিয়ন থেকে একটি বড় উত্থান। এই মূল্য ২০১৯ সালে ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছিল।
ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে ৮ মাসে প্রবৃদ্ধি ৪৫% : ইউরোপীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুসারে ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এ বছরের আট মাসে ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয় ৪৫.২৬ শতাংশ। আয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাটের গত জানুয়ারি-আগস্ট ২০২২ সময়ে পোশাক আমদানির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে ।
তথ্য অনুসারে, এই সময়ে ইউরোপ সর্বোচ্চ আমদানি করেছে ছয় হাজার ৭১৮ কোটি (৬৭.১৮ বিলিয়ন) ডলার। উল্লিখিত সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৫৩৭ কোটি ডলার (১৫.৩৭ বিলিয়ন) মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে।
এই হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট পোশাক আমদানিতে ২২.৮৯ শতাংশ অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইউরোপের পোশাক আমদানির দ্বিতীয় বড় উৎস হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। একই সঙ্গে ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ৪৫.২৬ শতাংশ বেড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানিতে সরবরাহকারী সব শীর্ষ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের।
এ ছাড়া চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানির প্রধান শীর্ষস্থানীয় উৎস এবং ২৮.০৬ শতাংশ অংশ নিয়ে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৫৯ শতাংশ।