গাজায় ইসরায়েলি হামলা: পেটে ক্ষুধা, মাথার ওপর ছাদ নেই, আছে জীবন হারানোর ভয়
গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা যেন বলে শেষ করার নয়। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে বুকে পাথর চেপে দিন পার করছেন তারা। পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা, মাথার ওপর নেই ছাদ। সেই সঙ্গে তাড়া করছে ইসরায়েলি হামলায় জীবন হারানোর ভয়।
পাখির চোখে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, গাজায় একটি ভবনও অক্ষত নেই। ইসরায়েলি আগ্রাসনের ছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে এ অঞ্চলের প্রতিটি ধূলিকণা।
কোথাও মরদেহ নিয়ে স্বজনের আহাজারি, কোথাওবা প্রিয় সন্তানকে চিরবিদায় দিচ্ছেন অভাগা বাবা-মা। মরে গিয়েও হয়তো বেঁচে গেছে তারা। ইহুদি হায়েনার আতঙ্ক আর গ্রাস করবে না তাদের। এবার হয়তো শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারবে।
তবে গাজার মাটিতে যারা বেঁচে আছেন তাদের জীবনও মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তারাও প্রতিনিয়ত ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, লড়ে যাচ্ছেন মাথার উপরে কয়েক ফুট ছাদের জন্য। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। তবে দিনশেষে তা অধরাই থেকে যায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের কাছে।
গাজায় বসবাসকারী একজন বলেন, ‘ছিন্নহারা আমরা। বাসস্থানের জন্য সংগ্রাম করছি। মানুষ হিসেবে যা লজ্জার। নিজ বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাবুতে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই।’
যারা আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন তাদের পরিস্থিতি আরও নাজুক। অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধ এমনকি ব্যান্ডেজের কাপড়ের সংকট চরমে উঠেছে গাজার সব হাসপাতালগুলোর।
হাসপাতালে আসা একজন বলেন, ‘ভাই আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স নাই। কোনো রকম একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে এসে মরদেহের স্তূপ দেখছি।’
জরুরি সরঞ্জামের অভাবে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল হয়ে যাচ্ছে উপত্যকাটির সবচেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতালের।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মুনির আল বারশ বলেন, ‘এবারের হামলায় হাসপাতালে অনেক বড় সংকটে পড়েছে। রোগীরা এসে চিৎকার করছে। কিন্তু জরুরি সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসা দিতে পারছি না। প্রয়োজনের প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামই আমাদের কাছে নেই।’
প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে গাজায় কোনো ধরনের জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। আর এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।