পুলিশের অনলাইনভিত্তিক ‘পেপারলেস পুলিশিং’ কার্যক্রম শুরু
কাজের প্রচলিত ধারা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ। সৃষ্টি করেছে অনলাইনভিত্তিক নতুন ধারা। চালু করেছে ‘পেপারলেস পুলিশিং’। এতে থাকছে না ফাইল চালাচালি। নেই কাগজপত্র প্রিন্ট করার ঝামেলা। লাগছে না ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষর। মর্নিং রিপোর্টসহ সব ধরনের প্রতিবেদন বা অপরাধ তথ্য জেলা থেকে রেঞ্জ অফিসে আসছে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন পুলিশের কাজে গতি বেড়েছে, অন্যদিকে সাশ্রয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। পাশাপাশি বেঁচে যাচ্ছে অনেক সময়। পর্যায়ক্রমে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটেও এ ধরনের পেপারলেস পুলিশিং শুরু হবে। করোনাভাইরাস খুলে দিয়েছে নতুন চোখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, নতুন এ কর্ম পদ্ধতির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আইজিপির বক্তব্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা রেঞ্জের এ উদ্যোগ সারা দেশের পুলিশি কার্যক্রমে গতি বাড়াবে।
সূত্র জানায়, প্রতি মাসের শুরুতে রেঞ্জের অধীন সব থানা থেকে প্রায় ৬৪টি ছকে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। গতানুগতিক পুলিশিংয়ের আওতায় এ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য থানাগুলোতে পূর্ববর্তী মাসের শেষ কর্মদিবসে তথ্য হালনাগাদ করা হয়। হালনাগাদ তথ্য পাঠানো হয় জেলা পুলিশ সুপার অফিসে। তথ্য হালনাগাদ ও জেলা অফিসে পাঠাতে ২-৩ দিন সময় লেগে যায়। জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে রেঞ্জ অফিসে আসতে আরও দুদিন সময় ব্যয় হয়। রেঞ্জ অফিসে তথ্য যাচাই-বাছাই ও পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানোর উপযোগী করতে লাগে আরও দুদিন। সরকারি ছুটি, ভিআইপি কার্যক্রম ও অনান্য কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে আরও দুদিন সময় রাখতে হয়। সব মিলিয়ে যে প্রতিবেদন প্রতি মাসের প্রথম দিন পুলিশ সদর দপ্তরে পৌঁছার কথা সেটি পৌঁছতে কমপক্ষে ৯ দিন লাগছে। কিন্তু ঢাকা রেঞ্জের নতুন উদ্যোগের কারণে রেঞ্জের ৬৪টি ছক মাসের প্রথম দিনে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরে। এতে শুধু কাগজের অপচয়ই বন্ধ হচ্ছে না। লাগছে না কোনো ডাক ডিউটি। প্রয়োজন হচ্ছে না যানবাহনের। সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দিতে হচ্ছে না কোনো তাগিদপত্র।
জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) জিহাদুল কবির বলেন, পেপারলেস পুলিশিং বাস্তবায়নে প্রথমে মর্নিং রিপোর্টকে অনলাইনের আওতায় আনা হয়। এ প্রক্রিয়ায় জেলা থেকে রিপোর্ট তথা তথ্য আনতে কোনো কাগজের প্রয়োজন হয় না। নিজ নিজ জেলার কন্ট্রোলরুমে বসে কম্পিউটার অপারেটররা গুগল শিটে (বিশেষ সফটওয়্যার) রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। ওই সফটওয়্যারের একটি লিংক রেঞ্জ অফিসের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আছে। ওই কর্মকর্তারা যে কোনো সময়ে যে কোনো ডিভাইস থেকে ওই লিংকে প্রবেশ করে রিপোর্ট দেখতে পান।
তিনি বলেন, মর্নিং রিপোর্টের মাধ্যমে পেপারলেস পুলিশিংয়ের সফলতার পর একই পদ্ধতিতে শুরু হয় জেলা থেকে অপরাধ তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের আওতায় সুনির্দিষ্ট অপরাধ তথ্য যেমন- ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, নারী ও শিশুসংক্রান্ত সব মামলার পরিসংখ্যান একটি ছকে প্রতিদিন হালনাগাদ করা হয়। অনলাইনভিত্তিক ওই ছক থেকে রেঞ্জাধীন সব মামলার পরিসংখ্যান হালনাগাদ অবস্থায় প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে গুগুল শিটে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, অনলাইনে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও অপরাধ তথ্য সংগ্রহের একটি সুবিধা হলো, যে কোনো প্রয়োজনে নির্ধারিত পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা যে কোনো সময় ওই সফটওয়্যারে প্রবেশ করতে পারেন। তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, প্রয়োজনে প্রিন্ট দিতে পারেন। কিন্তু তথ্য সংযোজন-বিয়োজন করতে পারবেন না। নূরে আলম মিনা বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর, মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কেউ কোনো তথ্য চাইলে এখন আর চিঠি দিয়ে থানা বা পুলিশ সুপারের কাছ তথ্য চাইতে হয় না। একটি ক্লিকেই সব অপরাধ তথ্যের পরিসংখ্যান সহজে পাওয়া যায়। গুগল শিটেই এসব তথ্য সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তা সরাসরি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এখন শুধু ঢাকা রেঞ্জ অফিসের ডেজিগনেটেড কর্মকর্তা সব জেলার পেপারলেস পুলিশিং কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারছেন।
কোন প্রেক্ষাপটে এবং পেপারলেস পুলিশং শুরু হলো জানতে চাইলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে দেয়া হয় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। তখনই নতুন মাত্রার পুলিশিংয়ের চিন্তা-ভাবনা করা হয়। এ চিন্তা থেকে পুলিশের যে অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা খুবই পরিবেশ সহায়ক।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স) মাহবুবুর রহমান বলেন, গুগল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক দাপ্তরিক কার্যক্রম খুব সহজেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ফাইলে সব তথ্য সূত্র আকারে ইনপুট দেন। এ কারণে প্রতিটি ডাটা ইনপুট স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্বের ডাটার সঙ্গে যোগ হয়ে যায়। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেভ হয়ে যায়।