পুরনো বাসে নতুন সাজ, ঝুঁকিতে ঈদযাত্রা

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষে আর কয়েকদিন পরেই ঈদ উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের পানে ছুটবেন মানুষ। উত্তরের বাসিন্দারাও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন।

ঈদযাত্রায় মানুষের বাড়তি চাপের কারণে দেশের সব সড়কে যাত্রীচাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এর মধ্যে উত্তরের পথে গাড়ির চাপ থাকে বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অনেকে পুরোনো বাস মেরামত করছেন। লক্কড়-ঝক্কড় বাস মেরামতের হিড়িক পড়ায় নিরাপদ ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ এবং বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদকে সামনে রেখে ফিটনেসবিহীন পুরাতন ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের বাস গাড়ি মেরামত করার কারিগররা। পুরাতন গাড়িগুলোকে নতুন রুপ দিতে মেকানিক ও বাসের ওয়ার্কশপে চলছে রং-তুলির সাজসজ্জার কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের পলিটেকনিক থেকে শুরু করে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত অবস্থিত একাধিক গাড়ি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে মেরামতের মহাযজ্ঞ। কেউ রং নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা ভাঙা অংশে জোড়া লাগাতে ব্যস্ত। এছাড়াও গাড়ির ইঞ্জিন এবং ইলেকট্রিকের কাজও করছেন তারা।

গাড়ির মালিকরা জানান, ঈদের আগে গাড়ি নতুন করে রঙ করালে তা দেখতে আকর্ষণীয় লাগে, পাশাপাশি পুরাতন গাড়ির মূল্যও কিছুটা বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে ঈদ যাত্রায় যেন গাড়ি নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। টুকটাক কাজ থাকলে সেগুলোও এই সময়েই করে নেই। গাড়ির ফিটনেস না থাকলে রাস্তায় গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

মেকানিক ও রংমিস্ত্রিরা বলছেন- ঈদের মৌসুমে তারা গাড়ির ইঞ্জিন, রং, লাইটিংয়ের কাজ করে থাকেন যেন চলতি পথে গাড়ি কোনো প্রকার বিকল না হয়। ঈদ মৌসুমে কাজের চাপ থাকলেও এইবার তুলনামূলক চাপ কম।

ইঞ্জিন মিস্ত্রী রনি বলেন, ঈদের সামনে ক্লাচ প্লেট, গিয়ার, ইঞ্জিনওয়েল, চাকা, মোট কথা একটা সার্ভিসিং করে দেই। কিন্তু তুলনামূলকভাবে এবার আমাদের কাজ নেই। রমজান মাসে অধিকাংশ গাড়ি বসা। রাস্তায় যাত্রী নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু আয় করার আশায় মালিকরা গাড়ি সার্ভিসিং করে নিচ্ছে।

বডি মিস্ত্রী মফিজ বলেন, ফিটনেসের বিষয়টা অফিস বুঝবে। আমরা সাধারণত গাড়ির মেরামত করি। মালিকরা চায় গাড়ি ঝকঝকে থাকুক, তাই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির কাজও করতে হয়। না হলে অফিস থেকে ফিটনেস দেয় না।

টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, টাঙ্গাইলের ৯৮ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস রয়েছে। বাকি ২ শতাংশ নেই। তবে আমি তাদেরও নিরুৎসাহিত করি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চালানোর কোনো সুযোগ নেই।

টাঙ্গাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন জানান, সর্বোচ্চ মহল থেকেই একটা নির্দেশনা থাকে এবং মালিক, শ্রমিক অফিসেও চিঠি দেওয়া হয় যেন ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি সড়কে না আসে। তবুও কিছু অসাধু মহল ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এমনটা করে। ঈদের সময় যখন আমরা ব্যস্ত থাকি, ঠিক সেই সময়ে অসাধু শ্রমিক ও মালিকরা তাদের ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামিয়ে দেয়।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের সময় আমরা যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকি বলে তখন মামলা দিতে পারি না। আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। যখন সাধারণ মানুষ সচেতন হবে, যে আমরা লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে উঠবে না ঠিক তখনই এটার সমাধান আসবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.