পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে ফের তীব্র চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ!
পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের মাধ্যমে আবারো তীব্র হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ। চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ পদার্থ, জ্বালানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা আমদানি শুল্ক কার্যকর করেছে চীন। এছাড়াও ২৫টি বিরল ও মূল্যবান ধাতু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেইজিং। যদিও চীনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে তাদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো আলোচনা ছাড়া এ ধরনের প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের ঘটনা সত্যিই আশ্চর্যজনক।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই বৈশ্বিক অর্থনীতির হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৮ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই চীনের সঙ্গে রীতিমতো বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ান তিনি। তখন যুক্তি দিয়েছিলেন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি।
গেল ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের এবারের অজুহাত, যুক্তরাষ্ট্রকে অভ্যন্তরীণভাবে ধ্বংস করতে ফেন্টানিল মাদক পাঠাচ্ছে চীন। আর তাই বেইজিংকে শাস্তি দিতেই নতুন করে এই শুল্কারোপ। জবাবে চীন বলছে, ফেন্টানিল যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা। এখানে চীনের কোনো দায় নেই।
এর এক সপ্তাহ না যেতেই এবার মার্কিন শুল্কারোপের জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ পদার্থ, জ্বালানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পাল্টা করারোপ করলো বেইজিং। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি যোগ্য ২৫টি বিরল ও মূল্যবান ধাতু রপ্তানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন। এছাড়া, মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধে একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে শি জিনপিং প্রশাসন।
কানাডা-মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের আলোচনার দুয়ার খোলা থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বিশ্লেষকদের মতে, দুই নেতার মধ্যে আলোচনা ছাড়া বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো কঠিন।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রদ্রিগো জেইদান বলেন, ‘এটি আসলেই অবাক করার মতো বিষয়। দুই দেশের সরকার নিজেদের মধ্যে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মূল কথা হলো, আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর পর্যায়ে আছি। এই মুহূর্তে, ট্রাম্প কারো কথাই কানে তুলছেন না।’
যদিও চীনের আমদানি-রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বরং মার্কিন গ্রাহকরাই বিপাকে পড়বেন।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুল্কারোপের ফলে পণ্যের অতিরিক্ত দাম মার্কিন জনগণকেই বহন করতে হবে। এতে আমাদের ব্যবসায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’
অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি প্রভাবিত করবে না। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নজর রাখছি।’
অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের অর্ডার এত বেশি যে সেগুলো এখনো পূরণ করতে পারছি না। তাই নতুন করে শুল্ক বসালে আমাদের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে না।’
এদিকে কানাডা, মেক্সিকো, চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশের ওপরও শুল্কারোপের পরিকল্পনা আছে ট্রাম্পের। যদিও এখনও সেসব দেশের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটি ব্যাপক পরিসরে কার্যকর হবে।