জনপ্রিয় ব্রিটিশ বক্তা মুহাম্মদ জন ওয়েবস্টার (Muhammad John Webster) ১৯১৩ সালের ডিসেম্বর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে নিজ ধর্মের প্রতি আস্থা হারিয়ে কমিউনিজম গ্রহণ করেন। এর পর ঝুঁকে পড়েন প্রকৃতিবাদের ওপর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা পাঠ করে অভিভূত হন এবং মধ্য বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মুসলিমদের উন্নয়নে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য ইংলিশ মুসলিম মিশন’ নামক সংস্থা। ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে তিনি মারা যান। নিজের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন—
কৈশোরে খ্রিস্টবাদের প্রতি দুর্বলতা : আমার জন্ম লন্ডনের একটি প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান পরিবারে। ১৯৩০ সালে কৈশোর বয়সে আমি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। একজন বুদ্ধিমান যুবক সাধারণত যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমস্যার সূচনা হয় যখন আমি দৈনন্দিন বিষয়গুলোকে ধর্মের সঙ্গে মেলাতে শুরু করি। তখনই প্রথমবারের মতো আমার সামনে খ্রিস্টবাদের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। খ্রিস্টবাদ একটি দ্বৈতবাদ, যা একদিকে বিশ্বকে পাপী প্রমাণিত করে, অন্যদিকে প্রত্যাশা করে মানুষ যেন বাস্তবমুখী হয় এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হয়। ফলে তারা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী রবিবারের জন্ম দিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে যার কোনো স্থান নেই।
কমিউনিজমের সাময়িত তৃপ্তি : এ সময় ইংল্যান্ডে ভয়াবহ দারিদ্র্য ও সামাজিক অসন্তোষ দেখা দেয়। অথচ খ্রিস্টবাদে এর কোনো সমাধান ছিল না। অন্য যুবকদের মতো জ্ঞানের চেয়ে আবেগি আমি চার্চকে প্রত্যাখ্যান করে একজন কমিউনিস্ট হয়ে যাই। একজন কিশোরের জন্য কমিউনিজমে সাময়িক তৃপ্তির একটি জায়গা আছে। তবে শ্রেণিযুদ্ধ এই মতবাদের ঘৃণ্য প্রকৃতি বুঝতে আমার বেশি সময় লাগেনি। কেননা শ্রেণিযুদ্ধ, যা সমাজে বিদ্বেষ ও বিশৃঙ্খলা ছড়ায় তা কমিউনিজমের অস্তি-মজ্জায় মিশে আছে। কমিউনিজমের বস্তুবাদকে প্রত্যাখ্যান করে আমি দর্শন ও ধর্ম পাঠ শুরু করি। পরিবেশ-প্রতিবেশ পর্যবেক্ষণের পর আমি নিজেকে একজন প্রকৃতিবাদী হিসেবেই চিহ্নিত করলাম। প্রকৃতিবাদ (Pantheism)হলো প্রাকৃতিক নিয়মের ধর্ম।
সিডনির পাঠাগারে কোরআনের অনুবাদের খোঁজে : আমরা যারা পশ্চিমা বিশ্বে বসবাস করি, আমাদের জন্য ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া তখন থেকেই কঠিন হয়ে গেছে, যখন থেকে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামকে নিশ্চুপ করে দেওয়ার এবং ইসলামী বিষয়গুলোকে প্রতিহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যা-ই হোক আমি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানের সময় সিডনি গণপাঠাগারে কোরআনের একটি অনুলিপি চাইলাম। আমাকে যখন তা দেওয়া হলো আমি অনুবাদকের লেখা ভূমিকাটি পড়লাম। সেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন চরম ধর্মান্ধতা ছিল যে আমি তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। সেখানে মুসলিমদের অনূদিত কোরআনের অনুলিপি পাওয়া সহজ ছিল না। কয়েক সপ্তাহ পর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে আমি আবারও একটি পাঠাগারে কোরআনের অনুলিপি চাইলাম। শর্ত দিলাম সেটা অবশ্যই মুসলমানের অনুবাদ হতে হবে। কোরআনের প্রথম সুরার সাতটি আয়াত তিলাওয়াতের পর আমার প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল তা বলে বোঝানো কঠিন। এরপর আমি মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর কিছু অংশ পাঠ করলাম। সেদিন আমি দীর্ঘ সময় পাঠাগারে কাটালাম। আল্লাহর অনুগ্রহে আমি যা খুঁজছিলাম তা খুঁজে পেলাম।
সত্যের খোঁজে মনের তৃপ্তি : প্রকৃতপক্ষে আমি মুসলিম ছিলাম না। তখনো কোনো মুসলমানের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। অভূতপূর্ব বৌদ্ধিক ও মানসিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি পাঠাগার থেকে বের হলাম। তখনো আমার ঘোর কাটেনি। আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম—এটা কি সত্য? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এমন কনকনে শীতে তো স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়। আমি এক কাপ কফি হাতে নিয়ে পাঠাগার থেকে সড়কে বের হয়ে এলাম। উঁচু মিনারবিশিষ্ট এক ভবনে লেখা দেখলাম ‘মুসলিম মসজিদ’। মনকে বললাম, তুমি সত্য খুঁজে পেয়েছ এবং তা গ্রহণ করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহে কলেমা পাঠ করে মুসলিম হলাম। আল-হামদুলিল্লাহ!