পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শোয়া ও থুতু ফেলা নিয়ে যা জানা জরুরি
বান্দার আমলেই নির্ধারণ হবে পরকালে তার ঠিকানা চিরশান্তির জান্নাত নাকি জাহান্নাম। তাই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর ‘পরীক্ষায়’ উত্তীর্ণ হয়ে পরকালে সফল হতে মহান রবের হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ এবং তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ জরুরি। এজন্য বিভিন্ন সময়ে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) যেমন উম্মতদের নানা বিষয়ে আদেশ-নিষেধের কথা জানিয়েছেন, তেমনি বাতলে দিয়েছেন মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের পথও।
পবিত্র কুরআনে খোদ মহান রব ঘোষণা দিয়েছেন, ‘হে নবী আপনি তাদের বলে দিন- যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)।
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানে হবে স্থায়ী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮২)
এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনের নানা শিষ্টাচারের বিষয়েও শিক্ষা দিয়েছেন নবীজি। সেই সঙ্গে উম্মতদের দৈনন্দিন জীবনের সব ভালো কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতেও শিখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধ্যমতো তার সব কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন। যেমন, অজু করার সময়, চিরুনি করার সময় এবং জুতা পরার সময়ও। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৯৩; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১০)
এ ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো- থুতু ফেলার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা। বর্তমান সময়ে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই এ বিষয়ে খেয়াল রাখেন না। অনেকেই একদিকে যেমন যেখানে-সেখানে থুতু ফেলেন, অন্যদিকে অবলীলায় কেউ কেউ পশ্চিম দিকে বা কিবলার দিকেও থুতু ফেলেন। অথচ, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা যেমন অশোভনীয়, তেমনি হাদিসেও এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার নিজের ডান দিকে থুতু ফেলার ক্ষেত্রেও নিষেধ রয়েছে।
হুযাইফাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি কিবলার দিকে থুতু ফেলে কিয়ামতের দিন সে ওই থুতু নিজের দুই চোখের মধ্যখানে (কপালে) নিয়ে উঠবে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮২৪)
আবু হুরায়রা (রা.) ও আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার মসজিদের দেয়ালে কফ দেখে কাঁকর দিয়ে তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি (নবীজি সা.) বললেন, তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা তার পায়ের নিচে ফেলে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪০০)
মনে রাখতে হবে, কিবলার দিকে মুখ করে ইস্তেঞ্জার (প্রস্রাব-পায়খানা করা) ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধ রয়েছে। আবু আয়্যূব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দেবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮৬)
অন্যদিকে পশ্চিম দিকে ফিরে পা দেয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। তবে অধিকাংশদের মত, এমনটা করা কিবলার শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। যদিও প্রয়োজনে কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালে গুনাহ হবে না।
এ বিষয়ে ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর ভাষ্য, অনেক ওলামায়ে কেরামদের ভাষ্যমতে- পশ্চিম দিকে (কিবলা) পা দিয়ে ঘুমালে গুনাহ হবে না। কারণ, কোনো হাদিসে পশ্চিম দিকে পা দেয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে পশ্চিম দিকে ফিরে ইস্তেঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) করার ব্যাপারে নিষেধ রয়েছে। যদিও অনেক ওলামায়ে কেরাম এমনটাও বলেছেন যে, পশ্চিম দিকে পা দেয়া কিবলার প্রতি এক ধরনের শিষ্টাচার পরিপস্থি কাজ। এজন্য এমনটা করা মোটেও উচিত নয়। তবে সবার মতেই পশ্চিম দিকে পা দিলে যে গুনাহ হবে, বিষয়টি এমন নয়। অর্থাৎ, প্রয়োজনে কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমালেও গুনাহ হবে না।

Comments are closed.