কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকায় আলোচিত সস্ত্রীক চিকিৎসক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
পুত্রবধূ শিউলির পরিকল্পনায় কিলিং মিশনে অংশ নেন তার পরকীয়া প্রেমিকসহ তিনজন। প্রথমে নামাজরত অবস্থায় থেকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় শাশুড়ি সফুরা বেগমকে। পরে ঘাতকরা অপেক্ষা করছিল বাহিরে থাকা শ্বশুর পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনের জন্য। পরে তিনি বাসায় ফিরলে একই কায়দায় তাকেও হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতক চক্র। কিন্তু ঘাতকরা নিরাপদে চলে যাওয়ার পর মূল পরিকল্পনাকারী পুত্রবধূ ঘটনাটিকে ডাকাতি হিসেবে চালাতে নিজের হাত-পা বেঁধে চিৎকার করতে থাকেন।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
তিনি জানান, আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর গ্রামের সস্ত্রীক নিহত পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনের বড় ছেলে প্রবাসী সৈয়দ আমানুল্লাহর স্ত্রী শিউলি (২৫) তার শ্বশুর-শাশুড়িকে হত্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানা পরিকল্পনা করে আসছিল। কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে খালাতো ভাই এবং পরকীয়া প্রেমিকসহ তার বন্ধুর সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বৈঠক করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে শিউলি তার খালাতো ভাই (পরকীয়া প্রেমিক) জহিরুল ইসলাম ওরফে সানিকে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে আসতে বলে।
রাত ৯টার দিকে সানি তার বন্ধু তুহিনকে নিয়ে শিউলির শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের দরজা খুলে তাদের প্রবেশ করায়। ঘাতক সানি ও তুহিন ঘরে প্রবেশ করার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শিউলি তার পরনের ওড়না দিয়ে নামাজরত অবস্থায় শাশুড়ির মুখ চেপে ধরে। তখন দুই ঘাতক তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। সানি ও তুহিন শিউলির শাশুড়িকে বিছানায় ফেলে হাত-পা বাঁধে, তখন শিউলি বিছানায় থাকা কম্বল দিয়ে শাশুড়িকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে ঘাতকরা শ্বশুর বিল্লাল হোসেন বাসায় আসার অপেক্ষা করছিল। কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক বিল্লাল হোসেন ঘরে প্রবেশ করলে একই কায়দায় শ্বাসরোধ করে তাকেও হত্যার করা হয়। পরে হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামিরা ঘরের আসবাবপত্র কাপড়-চোপড় মেঝেতে ফেলে রাখে।
ঘাতক শিউলির পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক সানি ও তুহিন শিউলিকে হাত-পা বেঁধে পালিয়ে যায়। ঘাতকরা নিরাপদে চলে যাওয়ার পর শিউলি ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে চিকিৎসক বিল্লাল এবং তার স্ত্রী সফুরার লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
এ সময় স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিউলীকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রহস্য খুঁজে পায় পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘাতক জহিরুল ইসলাম সানিকে নগরীর চর্থা এবং তুহিনকে জেলার বরুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
এর আগে নিহতদের মেয়ে সৈয়দা বিলকিস আক্তার বাদী হয়ে তার ভাবি শিউলী আক্তারকে এজাহারনামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘাতক জহিরুল ইসলাম সানি (১৯) নগরীর চর্থা এলাকার আব্দুর রহিম মজুমদারের ছেলে এবং মেহেদী হাসান তুহিন (১৮) জেলার লালমাই উপজেলার দক্ষিণ জয়কমতা গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে।
উল্লেখ্য, রোববার রাতে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর গ্রামে সস্ত্রীক পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে হত্যা করা হয়।