নৌবাহিনীর জন্য ‘ডেমো’ জাহাজ বানালেন বেলায়েত
ওয়াটার প্রুফ হওয়ায় ডুবে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, হেলে পড়লেও মুহূর্তের মধ্যেই পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে পারে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার বাতাস এবং ঢেউ প্রতিরোধ করে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে এমনই একটি ডেমো জাহাজ তৈরি করেছেন নুরে বেলায়েত আকাশ নামের এক ব্যক্তি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের হাসানগঞ্জ গ্রামের প্রবাসি আবু তাহের সিরাজের ছেলে বেলায়েত। বেলায়েত তার তৈরি এই জাহাজটির নাম দিয়েছেন ‘মেরিন রব্বানা।’ ২৮ দিনের চেষ্টায় রিমোট কন্ট্রোল রোবোটিস্ট ‘স্পেশাল অপারেশন মনিটরিং বোর্ট’ তৈরি করেন এই যুবক। তার তৈরি এই জাহাজটি দেখতে তাই প্রতিদিনই ভিড় করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন। বেলায়েতের আবিষ্কারের প্রশংসা করছেন তারা সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের সীমান্ত পাঙ্গাশিয়া বাজারের একটি দোকানের পেছনের ছোট কক্ষে বসে মাত্র ২৮ দিনের চেষ্টায় ‘স্পেশাল অপারেশন মনিটরিং বোর্ট’ বা যুদ্ধ জাহাজ তৈরী করেছেন বেলায়েত। বিজ্ঞান শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০২০ সালে বরিশাল মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হয়ে ইঞ্জিন প্রশিক্ষণ কোর্স করেন তিনি। জাহাজ প্রকৌশল সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলেও জাহাজ নির্মাণ প্রকৌশল এবং ইঞ্জিন সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে তার।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) হাসানগঞ্জ গ্রামে কথা হয় বেলায়েতের সঙ্গে। এসময় বেলায়েত জাহাজটির বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এ প্রতিবেদকের কাছে।
বেলায়েত বলেন, জাহাজটিতে লাইভ ক্যামেরা ও স্যাটেলাইটসহ নানা প্রযুক্তি রয়েছে। এটি রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই জাহাজটি দুর্যোগের মধ্যেও স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে। ১০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর অবস্থান নিশ্চিত করে গতিবিধি নজরদারি করতে পারবে এবং সংকেত পাঠাবে। এছাড়াও রয়েছে ড্রোন ফ্লাই করার ব্যবস্থাও। যার মধ্যমে দূরের অবস্থান সহজেই নির্নয় করা সম্ভব হবে।
বেলায়েত বলেন, জাহাজ নির্মাণে বাস্তব ধারণা না থাকলেও ইউটিউব এবং গুগল দেখে নিজের মেধা খাটিয়ে জাহাজটি নির্মাণ করেছি। সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন এ জাহাজটিকে নৌ বাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্মাণ করেছি। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে আমি আমার ‘ডেমো’ নির্মাণ করা জাহাজ উপহার দিতে চাই। সরকারের সহযোগীতা পেলে ভবিষ্যতে আরও প্রযুক্তিনির্ভর জাহাজ নির্মাণের ইচ্ছে রয়েছে। জাহাজটির বাস্তব রূপ দেওয়া গেলে প্রযুক্তিতে আরও কয়েক ধাপ ওগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
বেলায়েত আরও বলেন, ‘দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে নৌবাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা, টহল অভিযান ও যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের জাহাজ সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি। আমার উদ্ভাবিত পৃথিবীতে এমন জাহাজ দ্বিতীয়টি আর নেই। এটি নাবিকবিহীন বা নাবিক নিয়েও পরিচালনা করা যাবে। যদি সহযোগিতা পাই তাহলে জাহাজের এ ডেমোটি বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব।
উদ্ভাবক বেলায়েতের ভাই সাফায়েত হোসেন অন্তর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের প্রতিভা আছে। আমারা পারিবারের সদস্যরা তার উপর অনেক খুশি। বেলায়েত জাহাজ, ড্রোনসহ আরো অনেক কিছু বানিয়েছে। পরিবার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ পাটাওয়ারী, মোহাম্মদ রিফাদ,মো. সুমন ও শেখ সাদি বলেন, বেলায়েতের জাহাজ নির্মাণের খবর জানতে পেরে আমরা সেটি দেখতে এখানে এসেছি। আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। আমাদের এ ক্ষুদে বিজ্ঞানীর প্রতিভার মূল্যায়ন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান রাহুল বলেন, বেলায়েত যে মেরিন জাহাজটি নির্মাণ করেছেন এ জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই। তার উদ্ভাবিত জাহাজটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে সব ধরনের সহয়তা করবো। যদি মনে হয় এটি উপযুক্ত তাহলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে সহযোগীতা করা হবে।