নেপালেও ‘বালিশকাণ্ড’, সাবেক মন্ত্রীসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলোচিত ‘বালিশ কাণ্ডের’ মতো কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবার নেপালেও। সরকারি টাকায় কেনা বালিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি দেখিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল রূপপুর কেলেঙ্কারি। এ ঘটনা ‘বালিশ কাণ্ড’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

নেপালেও প্রায় একই ধরনের দুর্নীতির মামলার ঘটনা সামনে এসেছে। নেপালে পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পে কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে অবৈধ অর্থ লেনদেন করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পাঁচ সাবেক মন্ত্রী, ১০ সাবেক সচিবসহ ৫৫ জন ব্যক্তি ও একটি কোম্পানিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছে দেশটির দুর্নীতি তদন্ত কমিশন।

রোববার দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, চীনা অর্থায়নে নির্মিত এই প্রকল্পে ব্যয় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে প্রায় ৭ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার (৮৩৬ কোটি নেপালি রুপি) অনিয়মিতভাবে লেনদেন করা হয়েছে।

প্রকল্পের দরপত্র, ব্যয় নির্ধারণ এবং পরামর্শক নিয়োগেও বিভিন্ন অনিয়ম দেখা গেছে। নগদ অর্থের হিসাব অনুযায়ী এটি নেপালের বিশেষ আদালতে দাখিল করা সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মামলা। খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।

দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের অভিযোগপত্রে বলা হয়, পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ‘ক্ষতিকর অভিপ্রায়’ নিয়ে সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় হিসাব অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে প্রায় ৭ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ আগস্টের বিনিময় হার অনুযায়ী এই অর্থ ৮৩৬ কোটি নেপালি রুপির সমান।

প্রকল্পটি বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গোপন চুক্তি, অস্বচ্ছ দরপত্র এবং নানা বিতর্কে জর্জরিত ছিল। ১৯৭৫ সালে জমি অধিগ্রহণের পর বহু দফায় পরিকল্পনা সংশোধন ও স্থবিরতার মধ্য দিয়ে এটি এগিয়েছে।

 

চীনা কোম্পানি চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং–এর ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে দুর্নীতি বিরোধী কমিশন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি শুরু থেকেই ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ প্রকল্প দখলের চেষ্টা করেছে। ২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বার্ষা মান পুন গোপনে সিএএমসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন, যা পরে সংসদীয় কমিটিতে ফাঁস হয় এবং প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়।

২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দরপত্র, ব্যয় নির্ধারণ ও পরামর্শক নিয়োগে নানা অনিয়ম ঘটে। দরপত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানের ‘বিশেষ সুবিধা’ নিশ্চিত করা হয়। সিএএমসি প্রথমে প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রস্তাব করেছিল, যেখানে নেপাল সরকারের আনুমানিক খরচ ধরা ছিল ১৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রকল্পটি ২১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারে অনুমোদন পায়।

নেপালের দুর্নীতি বিরোধী কমিশনের দাবি, প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সমীক্ষা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই ‘ভুল প্রতিবেদন’-এর সঙ্গে কয়েকজন বিশেষজ্ঞও জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে নেপালের সাবেক পর্যটনমন্ত্রী পোস্ত বাহাদুর বোগাটি, ভীম প্রসাদ আচার্য, রাম কুমার শ্রেষ্ঠ, দীপক চন্দ্র আমাত্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী রাম শরণ মহাতসহ অনেক শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে।

এছাড়া, চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং বো এবং আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজার লিউ শেংচেংকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

You might also like

Comments are closed.