নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া হলো না শান্তর

গলের শান্ত সকাল, তবে ছন্দপতন হয়েছে দিনের শুরুতেই। বাংলাদেশ যখন ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করল, তখন ক্রিজে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। আগের দিন দুর্দান্তভাবে ২৬৪ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুজন, যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি হিসেবে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিয়েছে। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি দ্বিতীয় দিনে।

 

 

আজ দিনের সপ্তম ওভারেই শান্তকে ফেরান আসিথা ফার্নান্দো। ইনিংসের ৯৭তম ওভারের প্রথম বলটি আচমকা লাফিয়ে উঠে শান্তকে বিভ্রান্ত করে এবং ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় মিড অফে। সেখানেই ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তাঁর তীব্র উদযাপনেই বোঝা যায়, কতটা তৃপ্তি এসেছে সেই ক্যাচে। শান্ত থেমেছেন ১৪৮ রানে, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। সবচেয়ে বেশি ১৬৩ করেছিলেন তিন বছর আগে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই পাল্লেকেলেতে। সেই রান টপকে যাওয়া হলো না।

আসলে শান্ত আজ আরেকটু আগেই ফিরতে পারতেন। দিনের শুরুতেই, ইনিংসের ৯৫তম ওভারে এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছিলেন তিনি। আম্পায়ারও আউট দিয়েছিলেন, কিন্তু রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্পের বাইরের পিচে পড়েছে। তখন তাঁর রান ছিল ১৪৩। সেখান থেকে আর মাত্র ৫ রান যোগ করে শেষ পর্যন্ত ১৪৮ রানে থেমে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার।

এই ইনিংসে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অবশ্য শান্ত‑মুশফিকের জুটির। ৪৮০ বল মোকাবিলা করে ২৬৪ রানের যা গড়েছেন তারা, তা শুধু রান-সংখ্যার দিক থেকেই নয়, পরিস্থিতির বিবেচনায়ও ছিল অসামান্য। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলেন এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। এই জুটি ভেঙেছে দলীয় ৩০৯ রানে।

শান্ত ফিরে গেলেও মুশফিকুর রহিম ছিলেন অবিচল। ব্যাটিংয়ের এক পর্যায়ে তাঁর রান দাঁড়ায় ১৩০*। গলে আগেও টেস্টের ইতিহাস গড়েছেন তিনি-২০১৩ সালে করেছিলেন দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এবারও সেই একই মাঠে সেই সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছেন তিনি। সঙ্গে তখন ছিলেন লিটন দাস, যিনি ধীরগতিতে শুরু করলেও ক্রিজে স্থির ছিলেন।

মুশফিক যে কেবল অভিজ্ঞতায় নয়, রেকর্ডেও বাংলাদেশের সেরা, তা আরেকবার বোঝা গেল। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান (৬১৭৩), সর্বোচ্চ ম্যাচ (৯৭) ও সর্বোচ্চ তিনটি ডাবল সেঞ্চুরিও তাঁর দখলে। যদি এই ইনিংসে তিনি দ্বিশতক স্পর্শ করেন, তবে চতুর্থবারের মতো এই কীর্তি গড়বেন।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৩২৪ রান, ১০২ ওভার শেষে। ব্যাটিংয়ের এমন দৃঢ়তায় প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে টাইগাররা। এখন প্রশ্ন, কতদূর যেতে পারবেন মুশফিক, এবং তাঁকে কতটা সমর্থন দিতে পারবেন লিটন ও পরের ব্যাটাররা।

You might also like

Comments are closed.