মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ২২ দিন ধরে নিখোঁজ স্কুলছাত্র রোমান শেখের সন্ধান চেয়ে বিক্ষুব্ধ সহপাঠী ও স্বজনেরা থানা ঘেরাও করে হামলা চালিয়েছেন। এ সময় সিরাজদিখান থানা ও থানা প্রাঙ্গণের পাশে অবস্থিত সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়, কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের গাড়িসহ পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ রোমান শেখ (১৬) উপজেলার কোলা ইউনিয়নের থৈরগাও গ্রামের মিরাজ শেখের ছেলে। সে পাশের শ্রীনগর উপজেলার বেলতলী গঙ্গাপ্রসাদ জগন্নাথ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রোমান শেখ সবার ছোট। সংসারের অভাবের কারণে রোমান পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালাত। গত ২১ জানুয়ারি অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে রোমান।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের তিনটি গাড়িসহ অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। ছবি: সংগৃহীত
এ ঘটনায় ২৬ জানুয়ারি রোমানের বাবা মিরাজ শেখ বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ ও পরিচয় না জানা আরও পাঁচজনকে আসামি করে সিরাজদিখান থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ২৬ জানুয়ারি ২ জন ও ৩১ জানুয়ারি ১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিখোঁজ রোমানের সন্ধান চেয়ে সিরাজদিখান থানা-সংলগ্ন বাজার সড়কে মানববন্ধন করেন তার সহপাঠী, স্বজন ও এলাকাবাসী। এ সময় রোমানের বাবা মিরাজ শেখ, চাচা সুমন শেখ, রোমানের খালাতো ভাই সিয়াম ও পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানববন্ধনকারীরা বিক্ষোভ করতে করতে থানা ঘেরাও করেন। থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ মূল ফটকের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সে সময় রোমানের সন্ধানের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে থানা ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের জানালার কাচ, এ দুটি কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের তিনটি গাড়িসহ অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে নিখোঁজ রোমানের স্বজনেরা বিক্ষোভকারীদের থামান।
বিক্ষোভকারীরা সিরাজদিখান থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ ভাঙচুর করেন। ছবি: সংগৃহীত
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বলেন, ২২ দিন ধরে রোমান নিখোঁজ। পুলিশ তার কোনো হদিস দিতে পারছে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দু-একজনকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। এটা পুলিশের ব্যর্থতা না দুর্বলতা, তারা সেটি জানতে চান। তারা আজকের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে উল্টো তাদের থানায় প্রবেশ করতে দিতে চায়নি। তাদের থানা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে। এর ফলে কিছু শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। পরে তারা সবাইকে বুঝিয়ে থানা থেকে নিয়ে গেছেন। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে রোমানের সন্ধান দিতে না পারলে এর চেয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
রোমানের বাবা মিরাজ শেখ বলেন, ‘২২ দিন হয়ে যাচ্ছে আমার ছেলেটির কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমাদের অভাব-অনটনের কারণে ছেলেটা অল্প বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি রিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল। লৌহজংয়ের একটি ভাঙারির দোকান থেকে রিকশাটি পাওয়া গেছে। আমরা হয় জীবিত, নয়তো মৃত ছেলের সন্ধান চাই। শেষবারের মতো হলেও ছেলেকে দেখতে চাই।’
বিক্ষোভকারীরা সিরাজদিখান থানার একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। ছবি: সংগৃহীত
জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাদিখান সার্কেল) ইমরান খান বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন জেলহাজতে রয়েছেন। তাদের কয়েক দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের একজন কিছু তথ্য দিয়েছেন। সে মোতাবেক আমরা রোমানকে খোঁজার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অথচ শিক্ষার্থী ও স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী তিন-চার শতাধিক মানুষ নিয়ে থানা ও আমার কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। থানা ও থানার বিভিন্ন কক্ষের সরঞ্জাম ভাঙচুর করেছে। পুলিশের গাড়িসহ একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমাদের পুলিশের কয়েকজন আহত হয়েছেন।’