নিউমোনিয়া রোগী বাড়ছে শিশু হাসপাতালে

শীতের শুরু থেকেই নিউমোনিয়া রোগী বাড়ছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। হাসপাতালের ১৯ শয্যার নিউমোনিয়া ওয়ার্ড এরই মধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ বিশেষ করে নিউমোনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বায়ু দূষণ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিনই ঠাণ্ডাজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। দূষিত বাতাসের সঙ্গে ঠান্ডা আবহাওয়ায় অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ঘটে বায়ুদূষণের কারণে।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৭৪ শিশুকে ৬৮১ শয্যার হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়েছে। গত মাসে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ছিল ২২৭ জন। অক্টোবর এবং সেপ্টেম্বর মাসে যথাক্রমে ২৯২ এবং ৩৭৮ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪ হাজার ১১৮ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫১১ জন এবং ২০২২ সালে ৩ হাজার ১০৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্য অনুসারে, গত ১৫ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৫ হাজার ৪৬৯ জন এবং মারা গেছেন ১৯ জন।

শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নাবিলা আকন্দ বলেন, বায়ুদূষণ নিউমোনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। শিশুদের শ্বাসতন্ত্র অন্যান্য বয়সের তুলনায় কম বিকশিত হয় এবং শিশুরা বেশিরভাগই বাতাসে আসা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মাধ্যমে আক্রান্ত হয়। বায়ুদূষণ হাঁপানি এবং নিউমোনিয়াসহ অনেক শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই ধরনের জটিলতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা কমবে।

হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে ছয় বছরের বিবি ফাতেমা ২৯ দিন ধরে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছে। তার মা মায়মুনা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ের আগে এই ধরনের তীব্র শ্বাসকষ্ট কখনো হয়নি। শীতকালে সাধারণত সর্দিকাশি থাকত তবে এবার ওর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।’

নরসিংদীর মাধবদীতে যেখানে মায়মুনারা থাকেন সেখানে অনেক জুতা ও পোশাকের কারখানা রয়েছে বলে জানান তিনি। চিকিৎসকরা বলেছেন আমার মেয়ের তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে এসব কারখানার দূষিত বাতাস।

অধ্যাপক মাহবুবুল বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়েছে।’

আইসিডিডিআর,বি’র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচটি সংক্রামক রোগের মধ্যে নিউমোনিয়া একটি। সংক্রামক রোগে শূন্য দশমিক ৭ মিলিয়ন মৃত্যুর ১৪ শতাংশ হয়ে থাকে নিউমোনিয়ায়।

আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি ঘণ্টায় ২-৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। প্রতি বছর মারা যায় কমপক্ষে ২৪ হাজার জন।

এ অবস্থায় শিশুর মাঝারি বা প্রচণ্ড জ্বর, কাশি এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া—এসব উপসর্গের দিকে চিকিত্সকরা অভিভাবকদের নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এসব লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। মাস্ক এবং আরামদায়ক গরম কাপড় পরা; এবং ঠান্ডাজনিত রোগের সংক্রমণ রোধে নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.