নদীতে ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসব শুরু

নববর্ষের আগমনী মুহূর্তে যেখানে সমতলের মানুষরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে এক পরিচিত ধারায়, সেখানে পাহাড়ে তা রূপ নেয় এক রঙিন, আবেগঘন উৎসবে। চার দিনব্যাপী এই আনন্দঘন আয়োজন শুরু হয় এক বিশেষ আচার ‘ফুল বিজু’র মধ্য দিয়ে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে সূর্য ওঠার আগে থানচিতে সাঙ্গু নদীসহ আশপাশের বিভিন্ন খাল ও ছড়ায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে বাহারী রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে চাকমা সম্প্রদায়, যেটি ফুল বিজু নামেও পরিচিত। এর আগের সকাল থেকে পুরো এলাকাজুড়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও শোভাযাত্রা করেন তারা।

এবারে উপজেলাজুড়ে ভরত পাড়া, রায়মোহন পাড়া, কমলাবাগান পাড়া, জ্ঞানলাল পাড়া ও ব্রহ্মদক্ত পাড়াসহ ৫টি গ্রামে তরুণ-তরুণীদের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটিকে উদযাপন করা হয়েছে।

চাকমা লোকরীতির বিশ্বাস, পুরাতন বছরের দুঃখ-গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবতার উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানালে নতুন বছর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবে। তাই ফুল বিজুর দিন ভোর থেকে বাড়ির পাশের নদী ও খালে গিয়ে প্রার্থনারত হয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানায় চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী নর-নারী। তবে এখন ফুল বিজু শুধু চাকমা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। মারমা, ত্রিপুরা ও স্থানীয় বাঙালিরাও অংশ নিচ্ছেন ফুলবিজুতে।

ফুল ভাসানো শেষে তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। নদীতে স্নান শেষে বাড়ি গিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে ছোটরা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজসজ্জা শেষে প্রস্তুতি চলে অতিথি অ্যাপায়নের। চাকমা পল্লীগুলোতে চলছে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলাও। কিন্তু এবারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমভাবে পালন করেছেন তারা দিনটিকে। নিজ নিজ গ্রামে ছাড়াও আনুষ্ঠানিকতাভাবে পালন করেছেন দিনটিকে।

চাকমা সমাজের যুবনেতা রনিজ চাকমা, কিরন জ্যোতি চাকমাসহ অনেকে বলেন, গত বছরে আমরা উৎসবটি গ্রাম পর্যায়ে করেছি, তবে এবারে বড় আকারে করতে যাচ্ছি। এ বছরে আবারও নতুনরূপে আনন্দ রূপ নিয়েছে। আগামী বছরে উৎসবটি উপজেলাজুড়ে আরও বিশাল আকারে আয়োজন করার চিন্তাভাবনা আছে। পুরোনো সব গ্লানি মুছে দিতে গঙ্গা মায়ের উদ্দেশ্যে আমরা ফুল ভাসিয়ে উৎসবটি পালন করে থাকি। আগামীকাল রোববার থেকে যে যার গ্রামে পালন করা হবে মূল বিঝু।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.