নতুন রেকর্ড গড়ল বিওয়াইডির হাইপার কার ইয়াংওয়াং ইউ৯

বৈদ্যুতিক গাড়ির গতির লড়াইয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছে চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি। প্রতিষ্ঠানটির বিলাসবহুল ব্র্যান্ড ইয়াংওয়াংয়ের হাইপার কার ‘ইয়াংওয়াং ইউ৯’ জার্মানির রেসিং ট্র্যাক নুরবার্গরিং নর্ডশ্লাইফে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এটি প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি, যা ৭ মিনিটেরও কম সময়ে এই ট্র্যাক একবার প্রদক্ষিণ (ল্যাপ) করতে সক্ষম হয়েছে।

বিওয়াইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত মাসে গাড়িটির ‘ইয়াংওয়াং ইউ৯ এক্সট্রিম’ নামের একটি বিশেষ লিমিটেড এডিশন সংস্করণ এই রেকর্ড গড়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। ‘গ্রিন হেল’ নামে পরিচিত এই ট্র্যাক পার হতে গাড়িটির সময় লাগে মাত্র ৬ মিনিট ৫৯.১৫৭ সেকেন্ড। জার্মান রেসার মরিৎজ ক্রাঞ্জ গাড়িটি চালান। গত বুধবার নুরবার্গরিং কর্তৃপক্ষ এই সময়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রোডাকশন ইভি’ ক্যাটাগরিতে নতুন রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

 

ইয়াংওয়াং ইউ৯ এই রেকর্ডের মাধ্যমে চীনের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বীকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে পেছনে ফেলেছে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল শাওমির সাড়া জাগানো সেডান ‘এসইউ৭ আল্ট্রা’-এর দখলে। শাওমির গাড়িটি চলতি বছরের শুরুতে ৭ মিনিট ৪.৯৫৭ সেকেন্ড সময় নিয়েছিল। ইয়াংওয়াং ইউ৯ সেই সময়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ সেকেন্ড কম সময়ে ল্যাপ সম্পন্ন করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নুরবার্গরিংয়ের এই রেকর্ড বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিকে তুলে ধরে। গত কয়েক বছরে এই ট্র্যাকের প্রোডাকশন ইভি রেকর্ডটি বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। এমনকি কখনো কখনো একই মাসে একাধিকবার রেকর্ড ভাঙার ঘটনাও ঘটেছে। এটি প্রমাণ করে, ইভি নির্মাতারা কত দ্রুত তাদের ব্যাটারি, মোটর এবং অ্যারোডাইনামিকস প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

 

 

তবে এই রেকর্ডের ‘প্রোডাকশন ভেহিকল’ বা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত গাড়ি তকমাটি নিয়ে কিছুটা বিতর্কও রয়েছে। কারণ ইয়াংওয়াং ইউ৯ এক্সট্রিম কোনো সাধারণ গাড়ি নয়। এটি একটি অত্যন্ত সীমিত সংস্করণের হাইপার কার। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিশেষ মডেল মাত্র ৩০টি ইউনিট তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সমালোচকদের মতে, এত কম সংখ্যক উৎপাদিত গাড়িকে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘প্রোডাকশন কার’ বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এই বিতর্কের বাইরেও, গাড়িটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অভাবনীয়। ইয়াংওয়াং ইউ৯ এক্সট্রিম গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে ১২০০-ভোল্টের প্ল্যাটফর্মে। এতে চারটি শক্তিশালী ইলেকট্রিক মোটর (প্রতি চাকায় একটি) ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩ হাজার হর্সপাওয়ার শক্তি উৎপাদন করতে পারে।

 

 

এটি শুধু ট্র্যাকের ল্যাপ টাইমে নয়, সর্বোচ্চ গতিতেও রেকর্ডধারী। গত মাসে এই একই গাড়ি ঘণ্টায় ৪৯৬.২২ কিলোমিটার (প্রায় ৩০৮ মাইল) গতি তুলে বিশ্বের দ্রুততম প্রোডাকশন গাড়ির খেতাব অর্জন করে।

বিওয়াইডি মূলত তাদের প্রকৌশলগত সক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এই ইউ৯ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ‘ই-ফোর প্ল্যাটফর্ম’ এবং ‘ডিসাস-এক্স’ (ইন্টেলিজেন্ট বডি কন্ট্রোল সিস্টেম) এই বিপুল শক্তিকে নুরবার্গরিংয়ের মতো কঠিন ট্র্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ক্রেতাদের ৯৯ শতাংশের কাছে নুরবার্গরিংয়ের ল্যাপ টাইমের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। তবে এটি বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি চমৎকার মঞ্চ। বিওয়াইডির জন্য এটি একটি বড় সাফল্য। প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন ৩ হাজার হর্সপাওয়ারের ইয়াংওয়াং ইউ৯-এর মতো বিলাসবহুল হাইপার কার তৈরি করছে, তেমনি অন্যদিকে মাত্র ১০ হাজার ডলার মূল্যের হ্যাচব্যাকও বাজারজাত করছে। গাড়ির বাজারে এত বৈচিত্র্যময় পণ্যসম্ভার খুব কম প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।

You might also like

Comments are closed.