নতুন যুগের বার্তা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ শুরু করেছেন পিকেকে যোদ্ধারা

তুরস্কের বিরুদ্ধে চার দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘটাতে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) শুক্রবার (১১ জুলাই) ইরাকের উত্তরে এক প্রতীকী অনুষ্ঠানে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। খবর দ্য ন্যাশনাল

ইরাকের সুলাইমানিয়ার পশ্চিমে ঐতিহাসিক জাসানা গুহায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ জন পিকেকে যোদ্ধা একে-৪৭ রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্র আগুনে নিক্ষেপ করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুর্দি, ইরাকি ও তুর্কি কর্মকর্তারা। এই পদক্ষেপকে শান্তি প্রক্রিয়ার পথে প্রথম দৃশ্যমান অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।

যোদ্ধারা নিজেদের ‘শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজ গ্রুপ’ পরিচয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছায়, আমাদের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক সংহতির ভিত্তিতে অস্ত্র ধ্বংস করছি।’ তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে অধিকার আদায়ের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানান।

পিকেকে এই সিদ্ধান্ত নেয় তাদের বন্দী নেতা আব্দুল্লাহ ওজালানের আহ্বানে। মে মাসে সংগঠনটি ঘোষণা দেয়, তারা নিরস্ত্রীকরণ ও বিলুপ্তির পথে হাঁটবে।

১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কে কারাবন্দী ওজালান গত বুধবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি অস্ত্র নয়, রাজনীতি ও সামাজিক শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমি আপনাদের এই নীতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানস্থল জাসানা গুহা কুর্দি প্রতিরোধের এক প্রতীক। ১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে বাথ পার্টির শাসনামলে কুর্দি পেশমার্গা যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এই গুহা।

অর্ধেক নারী যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে, যারা সিরিয়াল করে অস্ত্র তুলে দেন বিশাল ধূসর পাত্রে। এরপর সেগুলিকে আগুনে ফেলে দেয়া হয়। এসময় পাশে ছিলেন পিকেকে-র শীর্ষ নেত্রী বেসে হোজাত, যিনি তুর্কি ভাষায় সংগঠনের নিরস্ত্রীকরণের ঘোষণা পাঠ করেন।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া এক্স-এ বলেন, ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্কই ভ্রাতৃত্বের বিশ্বাসের জয়।’ তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইয়িলমাজ তুনচ বলেন, ‘পিকেকে শুধু উন্নয়নেই প্রতিবন্ধক ছিল না, বরং আমাদের জাতীয় ঐক্যকেও ব্যাহত করেছে।’

তবে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেটা’র বিশ্লেষক নেবি মিস এই অনুষ্ঠানকে ‘প্রচারণার ঝুঁকিপূর্ণ হাতিয়ার’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘অস্ত্র সমর্পণের ভিডিও যেন সংগঠনের প্রচারণায় পরিণত না হয়।’ তিনি বাকি অস্ত্রগুলোর হিসাব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

প্রো-কুর্দি পিপলস ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি পার্টি (ডিইএম) এর যুগ্ম-সভাপতিরা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ কুর্দি জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তুরস্ক-মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির এক নতুন যুগের সূচনা।’

কুর্দি বিশ্লেষক শাহো কারাদাগি বলেন, ‘আজ জাসানা গুহা শান্তির এক নতুন ইতিহাস রচনা করল।’

এদিকে তুরস্ক, ইরাক এবং কুর্দি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের উপস্থিতি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা সব মিলিয়ে এই পদক্ষেপ যে শুধু প্রতীকী নয়, বরং বাস্তব শান্তি প্রক্রিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

You might also like

Comments are closed.