নতুন গাড়ি কেনার আগে…
নতুন গাড়ি কেনা মানেই স্বপ্নপূরণ। এক সময় গাড়ি কেনা মানে ছিল পাহাড়সমান টাকার ধাক্কা। কিন্তু এখন সে কাজ বিশেষ কষ্টসাধ্য নয়; বরং গাড়ি এখন প্রতিদিনের ‘প্রয়োজনীয় সঙ্গী’ হয়ে উঠেছে।
আজকাল থোক টাকা না থাকলেও ঋণ বা লোন এবং কিস্তি সুবিধা থাকায় আরও সহজ হয়ে উঠেছে গাড়ি কেনার পরিকল্পনা। তাই অনেকেই নতুন চাকরি পেয়েই গাড়ি কেনার কথা ভাবেন। কিন্তু বাজারে এত গাড়ির মধ্যে কোন গাড়িটা কিনবেন? আর সল্প আয়ে কিস্তিই বা কীভাবে ম্যানেজ করবেন সেই চিন্তা কিন্তু থেকেই যায়। মাল্টিনিউজ২৪ডটকমের পক্ষ থেকে তাই গাড়ি কেনার আগে রইল কিছু টিপস।
অনেকেই লোনে গাড়ি কিনবেন ভেবে দামি গাড়ি কিনে ফেলেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তী কালে প্রতি মাসে বড় অংকের কিস্তি দেওয়ার কারণে তাদের বাজেটে গোলমাল হয়। পার্সোনাল ঋণ নিতে হয় এমনকি কোনো জরুরি পরিস্থিতি হলে মুশকিলে পড়তে হয়। তাই নতুন বছরে ঝকঝকে গাড়ি বাড়িতে নিয়ে আসার আগে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো।
ব্যাংক লোন : ব্যাংক ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে প্রথমেই ব্যাংকে চলে যান। এক্ষেত্রে একটি ব্যাংক নয়, একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলুন। এরপর সবচেয়ে কম সুদ দিতে হয় এমন ঋণ বেছে নিন। তারপর সেই ঋণের পরিমানের সঙ্গে আপনার বার্ষিক বাজেটের পরিকল্পনা করে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিন।
বার্ষিক আয় : আপনার বার্ষিক আয় যত টাকা, সবসময় বার্ষিক আয়ের ৫০ শতাংশ দামের গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ধরুন আপনার বার্ষিক আয় যদি ১২ লাখ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার উচিত ৬ লাখ টাকার মধ্যে গাড়ি কেনা। এই নিয়ম মানলে আপনার বাজেটে সমস্যা হবে না।
ডাউন পেমেন্ট : গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আপনার গাড়ির দাম যদি ৬ লাখ টাকা হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে মোট দামের ২০ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্ট করতে হবে। এখানে ৬ লাখ টাকার গাড়ি কিনলে আপনাকে ডাউন পেমেন্ট করতে হবে ১ লাখ ২০ হাজার।
এবার আপনার যদি আগে থেকে গাড়ির ডাউন পেমেন্টের জন্য বেশি টাকা জমানো থাকে তাহলে ডাউন পেমেন্ট একটু বেশি করবেন। এক্ষেত্রে আপনার লোনের বোঝা কিছুটা কম হবে। তা না হলে ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট করুন। কিন্তু ২০ শতাংশের কম করবেন না। এক্ষেত্রে বাজেটে প্রভাব পড়বে।
কিস্তির পরিমাণ : ধরা যাক আপনি ২০ শতাংশই ডাউন পেমেন্ট করেছেন। সেক্ষেত্রে আপনার লোন থাকছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর ওপর রয়েছে সুদের হার। ধরা যাক কোনো ব্যাংক থেকে আপনি ৯.২ শতাংশ হারে লোন নিয়েছেন। এবার লোনের মেয়াদের সঙ্গে আপনার সুদ এবং কিস্তির পরিমাণ যোগ করে দেখুন বাজেটের মধ্যে রয়েছে কিনা।
ধরা যাক ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার ওপর ৯.২ শতাংশ হারে যোগ করে আপনাকে প্রতিমাসে কিস্তি দিতে হচ্ছে ১১ হাজার ৯৯০ টাকা। এবার এই পরিমাণ আপনার বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখলে নির্দ্বিধায় গাড়িটা কিনে ফেলতে পারেন। তবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যাংকের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন।
লোনের দিকটা মিটে গেলেই এবার চিন্তা আসে কোন গাড়ি কিনবেন। গাড়ির বাজারে রয়েছে চোখ ধাঁধানো অপশন। কোনটা নেবেন, কোনটা নেবেন না এই চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। তার ওপর সামনেই নতুন বছর। একাধিক গাড়িতে বড় বড় অংকের ছাড় মিলবে। ফলে আপনি বাজেট অনুযায়ী সহজেই কোন কোম্পানির গাড়ি কিনবেন তা ঠিক করতে পারবেন। কিন্তু গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সেগুলি কী? দেখে নিন একনজরে।
ভাল করে রিসার্চ : প্রথম গাড়ি কেনার আগে ভাল করে রিসার্চ করে নেওয়া দরকার। কোন মডেলটি আপনার জন্য ভাল হবে সেটা বুঝে গাড়ি কেনা উচিত। কী কী ফিচার্স আপনি চাইছেন সেটি দেখে নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে সেফটির বিষয়টিও নজরে রাখা উচিত। তাছাড়া কোন এলাকায় আপনি থাকেন সেই এলাকার রাস্তা-ঘাট অনুযায়ী আপনি কোন গাড়ি কিনবেন তা বাছাই করতে পারেন।
গাড়ির ওয়ারেন্টি : সব গাড়িরই ওয়ারেন্টি থাকে। কিন্তু আপনি যে গাড়িটি পছন্দ করেছেন সেই গাড়িটির ওয়ারেন্টি কত দিনের সেটি জেনে নিন। প্রয়োজনে ওয়ারেন্টি এক্সটেন্ড করে নিন। কারণ গাড়ি কেনার পর এমনিই বাজেটের বিষয়টি থেকে যায় তার ওপর কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়াও যে সব গাড়ির পার্টস বাজারে সহজলভ্য, সেই গাড়িগুলিই পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রাখতে পারেন।
টেস্ট ড্রাইভ : যে গাড়ি কিনবেন ভাবছেন, ওই গাড়ি কেনার আগে টেস্ট ড্রাইভ করে নেওয়া খুবই জরুরি। একবার টেস্ট ড্রাইভ নিলে আপনিও বুঝতে পারবেন গাড়ি চালাতে কীরকম অভিজ্ঞতা হবে। একই সঙ্গে গাড়ির পারফরম্যান্স কেমন হবে তাও বুঝতে পারবেন।
পেট্রল নাকি ডিজেল : পেট্রল গাড়ির দাম ডিজেল গাড়ির দামের তুলনায় অনেক কম। তবে, পেট্রোলের দাম কিন্তু ডিজেলের থেকে বেশি। অন্যদিকে পেট্রোল গাড়ির তুলনায় ডিজেল গাড়ির মেনটেন্যান্স কিছুটা বেশি। তাই গাড়ি কেনার আগে এই বিষয়টা যাচাই করে নেবেন।
মাইলেজ : গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই মাইলেজের ব্যাপারটা দেখে নেবেন। আপনি যে গাড়িটি কিনছেন ১ লিটার পেট্রলে সেটি কত কিলোমিটার যাচ্ছে তা জেনে নেওয়া ভাল। কারণ আপন গাড়ির মাইলেজ বেশি হলে তা সরাসরি আপনার তেল খরচ কমিয়ে আনবে। তাই পকেটে বাড়তি বোঝা না চাপাতে চাইলে এই বিষয়টি যাচাই করে তবেই গাড়ি কিনুন।